• দুই শতাব্দীর পুরনো মজুমদার বাড়ির দুর্গোৎসব
    আনন্দবাজার | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সামসুল হুদা

    কালের গর্ভে মিশে গিয়েছে জমিদারি। হারিয়েছে গোলাভরা ধান, পাইক-বরকন্দাজ। প্রাচীন বাড়ির কোথাও কোথাও ক্ষয় ধরেছে, খসে গিয়েছে পলেস্তরাও। তবুও ভাঙড়ের স্বস্ত্যয়নগাছি গ্রামে মজুমদার বাড়ির দুর্গাপুজো আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। দুই শতাব্দী ধরে এখানে চলে আসছে দেবী দুর্গার আরাধনা।

    লোকমুখে এই আয়োজন পরিচিত ‘জমিদার বাড়ির পুজো’ নামে। আড়ম্বর ফিকে হলেও এলাকার মানুষের সম্প্রীতি ও যোগদানে পুজোর মাহাত্ম্য অটুট। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকলে মিলে আয়োজন সামলান। বিশেষ করে অষ্টমীর দিন মহাভোজ হয়ে ওঠে ভাঙড়ের সাম্প্রদায়িক ঐক্যের প্রতীক।

    স্বস্ত্যয়নগাছির এই প্রাসাদ একসময় ছিল তিন মহলার। আজ এক মহলা বিলীন হলেও অবশিষ্ট দুই মহলা বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। বাড়ির মূল বাসিন্দারা কর্মসূত্রে ছড়িয়ে পড়েছেন কলকাতা থেকে বিদেশ পর্যন্ত। গোবিন্দের নিত্যপুজো এবং দুর্গোৎসবের দায়িত্বে রয়েছেন পুরোহিত প্রফুল্লকুমার মিত্র ও একজন কেয়ারটেকার।

    এ বছরও প্রতিমা গড়ছেন শিখরপুরের শিল্পী ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস। জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। স্থানীয় মানুষ সবিতা পালিত, সুনীল কুমার ঘোষ, তপেন্দু ঘোষ ও পরিবারের সদস্যেরা একসঙ্গে পুজোর আয়োজন সামলান। পরিবারের বধূ প্রভাতী মজুমদার বলেন, “অতীতে কলকাতার চিৎপুর থেকে আমাদের শ্বশুরবাড়ির লোকজন জমিদারি রক্ষার জন্য এখানে এসেছিলেন। বর্তমানে দুর্গা পুজোই আমাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে।”

    পরিবারের সদস্য তপনকুমার মজুমদার ও তাপস মজুমদার জানান, অনেকেই অন্যত্র চলে গেলেও দুর্গোৎসব উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন এখানে আসেন। তাঁদের কথায়, “এই সময়টাতে বাড়ি যেন প্রাণ ফিরে পায়। আমরা সারা বছর অপেক্ষা করি এই ক’টা দিনের জন্য।”

    ভাঙড় ২ ব্লকের বিডিও পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের ব্লকে একশোরও বেশি দুর্গাপুজো হয়। তবে এত বছরের ঐতিহ্যের কারণে মজুমদার বাড়ির পুজো আলাদা গুরুত্ব পায়। আমাদের কাছে এই
    দুর্গোৎসব ভাঙড়ের গর্ব, অতীত ঐতিহ্যের সাক্ষ্য।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)