কলকাতা ছাড়ার আগে রাজ্যের মন্ত্রী সুজিতের মারফত দিদিকে নমস্কার পাঠালেন মোদী, বিতর্ক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্তকে নিয়ে
আনন্দবাজার | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সপ্তাহ তিনেক আগে তিনি পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন ‘রাজনৈতিক’ কর্মসূচিতে। এ বার এসেছিলেন পুরোদস্তুর ‘সরকারি’ কর্মসূচিতে। দুই সফরের ফারাক বহিরঙ্গে যেমন ধরা পড়েছে, তেমনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের আচরণেও বুঝিয়েছেন, দুই কর্মসূচির ফারাক সম্পর্কে তিনি সচেতন। রাজনৈতিক মন্তব্য বা সমাজমাধ্যমে পোস্ট তো নয়ই, নিজের দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলাদা দেখাসাক্ষাৎও এই সফরে করেননি মোদী। বরং সোমবার দুপুরে কলকাতা ছাড়ার আগে রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুর মাধ্যমে ‘নমস্কার’ জানিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
ভারতীয় সেনার পূর্ব কম্যান্ডের সদর দফতর বিজয় দুর্গে (সাবেক ফোর্ট উইলিয়াম) তিন দিনের ‘যৌথ সেনাপতি সম্মেলন ২০২৫’ শুরু হল সোমবার থেকে। দেশের সামরিক ও নাগরিক নেতৃত্বের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরের মত বিনিময়ের জন্য এই সম্মেলন প্রতি দু’বছর অন্তর হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করতে রবিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় আসেন। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে প্রটোকল মেনে রাজ্যের তরফে মন্ত্রী সুজিত ছিলেন। বিজেপির তরফে ছিলেন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। কলকাতায় নেমে তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করে মোদী রাজভবন চলে যান নৈশবাসের জন্য। মৃদু জল্পনা শুরু হয়েছিল যে, শমীক-শুভেন্দুকে রাজভবনে ডেকে পাঠাতে পারেন মোদী। কিন্তু অচিরেই জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী কোনও রাজনৈতিক নেতার সঙ্গেই দেখা করছেন না। বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, প্রথমত, এই সফর পুরোপুরি সরকারি। দ্বিতীয়ত, রাজভবন দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে। তাই প্রধানমন্ত্রী সচেতন ভাবেই নিজের দলের সঙ্গে আলাদা দেখাসাক্ষাৎ করা থেকে বিরত থেকেছেন।
প্রসঙ্গত, বিজেপিও এই সফর নিয়ে ‘বাড়াবাড়ি’ করেনি। গত ২৯ মে, ১৮ জুলাই এবং ২২ অগস্ট মোদী যথাক্রমে আলিপুরদুয়ার, দুর্গাপুর এবং দমদমে জনসভা করেছেন। পাশাপাশি ওই তিন সফরে প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভাও হয়েছিল। তিনি প্রশাসনিক মঞ্চ থেকে সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করার পর রাজনৈতিক সভার মঞ্চে যাচ্ছিলেন। সেই সফরগুলিতে প্রধানমন্ত্রীর বড় বড় কাটআউটে রাস্তা সাজানো হয়েছিল। যাত্রাপথের দু’ধার বিজেপির পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। মোদীকে ‘স্বাগত’ জানিয়ে বড় বড় হোর্ডিং-ব্যানার লাগানো হয়েছিল। বিজেপি কর্মীদের জমায়েতও ছিল। এ বারের সফরে বিজেপি সে সব আয়োজন থেকে বিরতই থেকেছে। ‘স্বাগতম’ লেখা ব্যানার বা কাটআউট নেই। দলীয় পতাকারও বাড়াবাড়ি নেই। সমাজমাধ্যম পোস্টেও রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা নেই।
রবিবার বিকাল থেকে বিমানবন্দরের ভিভিআইপি গেটের বাইরে অবশ্য দলীয় পতাকা এবং জাতীয় পতাকা হাতে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের জমায়েত ছিল। ঢাক-ঢোল বাজিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ‘স্বাগত’ জানানোর আয়োজন ছিল। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে কর্মীদের জমায়েত দেখে মোদী গাড়ির দরজা খুলে পাদানিতে উঠে দাঁড়িয়ে কর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। সেই ভিডিয়ো মোদী সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন। তবে সেখানে ‘বিজেপি’ শব্দটি কোথাও লেখেননি। কোনও রাজনৈতিক কথাও লেখেননি। কোন কর্মসূচিতে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছেন, সেটুকুই লিখেছেন।
সোমবার সকাল ৯টা ২৫ নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর কনভয় রাজভবন থেকে বিজয় দুর্গের উদ্দেশে রওনা দেয়। সকাল সাড়ে ৯টায় বিজয় দুর্গে পৌঁছে তিনি উদ্বোধন করেন ‘যৌথ সেনাপতি সম্মেলনে’র। বেলা ১টা পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। তার পরে রেসকোর্সে গিয়ে হেলিকপ্টারে রওনা দেন কলকাতা বিমানবন্দরের উদ্দেশে। ২টোর আগেই উড়ে যান বিহারে।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন শমীক, সুকান্ত এবং বিজেপির বিভিন্ন গণসংগঠনের রাজ্য সভাপতি। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ফের হাজির ছিলেন মন্ত্রী সুজিতই। প্রধানমন্ত্রী বিমানে ওঠার আগে নিজের দলের সকলকে ‘নমস্কার’ বলেন। সুজিতকেও একই কথা বলেন। কিন্তু তার সঙ্গেই বলেন, ‘‘দিদিকে আমার নমস্কার জানাবেন।’’
তবে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সুকান্তের প্রতি রাজ্যের পুলিশের ‘আচরণ’ নিয়ে। সোমবার মোদীকে বিদায় জানানোর সময় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর গাড়ি ভিভিআইপি গেট পর্যন্ত যেতে দেয়নি পুলিশ। কিছুটা দূরে পুলিশ ব্যারিকেডের বাইরে তাঁর গাড়ি আটকানো হয়। সুকান্ত সেখান থেকে হেঁটে ভিতরে যান। তবে সুজিতের গাড়ি আটকানো হয়নি। পুলিশের এই ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণ নিয়ে সুকান্ত প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা বলেন, ডিসি ম্যাডাম আমার গাড়ি ঢুকতে দিতে বারণ করেছেন। আমি এই ডিসি ম্যাডামের নামে স্বাধিকারভঙ্গের অভিযোগ জানাচ্ছি। লোকসভার স্পিকার ওঁকে ডেকে পাঠাবেন। যা জবাব দেওয়ার সেখানে দেবেন।’’ কথামতো সোমবারেই স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী।