তফসিলি শংসাপত্রের নিয়ম সরল করতে উদ্যোগী নবান্ন, ‘বিশেষ’ ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করার চেষ্টা, খোঁচা শুভেন্দুর
আনন্দবাজার | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
তফসিলি জাতি (এসসি) সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য শংসাপত্র প্রাপ্তির নিয়মে বড় পরিবর্তনের পথে রাজ্য সরকার। সোমবার নবান্নে রাজ্যের তফসিলি জাতি সম্প্রদায়ের জন্য সরকারি পরিষেবা সংক্রান্ত রিভিউ বৈঠকে এসি শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া সরল করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। বৈঠকে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন বলেই সরকারি সূত্রে খবর। আর এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজের 'বিশেষ' ভোটব্যাঙ্ক খুশী করতেই এই নতুন প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন বলে পাল্টা আক্রমণ শানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে প্রশাসনের একটি অংশ জানাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী যখন সায় দিয়েছেন, তখন তা বিষয়টি শীঘ্রই কার্যকর হবে।
নবান্ন সূত্রে খবর, এতদিন পর্যন্ত মা ও বাবার কারও এসসি শংসাপত্র না থাকলে সন্তানের জন্য শংসাপত্র পেতে রক্তসম্পর্ক থাকা দু’জনের শংসাপত্র প্রয়োজন হত। এ বার সেই নিয়মে বদল আনতে চলেছে নবান্ন। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, পরিবারের মধ্যে অন্তত একজনের এসসি শংসাপত্র থাকলেই আবেদনকারী শংসাপত্র পাওয়ার অধিকারী হবেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন, যোগ্য মানুষ যেন শংসাপত্র থেকে বঞ্চিত না হন। সঙ্গে কোনও ভাবেই অযোগ্যরা যাতে তালিকায় ঢুকতে না পারেন, তার জন্য কড়া নজরদারি রাখতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী সকলকে সতর্ক করে দেন যাতে সরকারি পরিষেবা প্রদানে কোনও গাফিলতি না হয়।
তবে বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘এই সরকার তফসিলি উপজাতিদের শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতি করেছে, তা প্রমাণিত। এ বার নতুন নিয়ম চালু করে ভুয়ো এসসি শংসাপত্র দিতে চাইছে। এ ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের মুখ পুড়বে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আসলে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের একটি বিশেষ অংশের মানুষের ভোট নিশ্চিত করতে চান। সেই সম্প্রদায় যাতে সহজেই এসসি শংসাপত্র জোগাড় করতে পারেন, সেই কারণেই এই নতুন নিয়ম আনা হচ্ছে। যদি সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারে রাজ্য সরকার কোনও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে হস্তক্ষেপ করে, তা হলে আমরা প্রতিবাদে সরব হব।’’
অন্যদিকে, বৈঠকে, মতুয়া ও নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে উন্নয়ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল রাজ্যসভা সাংসদ তথা মতুয়া মহাসংঘের নেত্রী মমতাবালা ঠাকুর। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন, মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ যেন যথাযথ কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন বলেই নবান্ন সূত্রে খবর। মমতাবালা আরও জানান, বাগদায় বি আর অম্বেডকরের নামে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ভবন তৈরি হলেও সেটি এখনও চালু হয়নি। তিনি দ্রুত স্কুলটি চালু করার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি, মালদহে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী উদ্বাস্তু মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য জমির পাট্টা প্রদানের বিষয়টিও মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনেন। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়গুলি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
মমতাবালা রাজ্যসভা সাংসদ হওয়ার পর থেকেই রাজ্য তফসিলি জাতি উন্নয়ন পর্ষদের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ, তিনিই পর্ষদের চেয়ারপার্সন ছিলেন। সাংসদ হয়ে যাওয়ায় নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পর্ষদ কার্যত অচল অবস্থায় ছিল। সোমবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ করে পর্ষদকে সক্রিয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। জয়নগরের তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল বৈঠকে ‘যোগ্যশ্রী প্রকল্প’-এর সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তরবঙ্গে প্রকল্পটির সুফল যথেষ্ঠ ভাবে পৌঁছচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়ন পর্ষদকে এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।