দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: এই বছর পুজোয় দিল্লির সি আর পার্কে খোঁজ মিলবে সোনার কেল্লার। দিল্লির অভিজাত বাঙালি পাড়া চিত্তরঞ্জন পার্কে উঠে আসবে একটুকরো জয়সলমীরও। তবে শুধুই সোনার কেল্লা কিংবা রাজস্থান নয়। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজবাড়ির সাময়িক ঠিকানাও এবার হতে চলেছে সি আর পার্ক। দিল্লির এই বাঙালি মহল্লায় এবার তিনটি পুজোর ৫০ বছর পূর্তি। আর তাই সোনার কেল্লা থেকে মহিষাদল রাজবাড়ি। কিংবা নবদুর্গা থেকে ৫০ হাজার প্রজ্জ্বলিত মাটির প্রদীপ। সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উদযাপনে এই বছর একে অপরকেই টেক্কা দিতে রীতিমতো মরিয়া সি আর পার্কের পুজো উদ্যোক্তারা। নিজেদের পুজো প্রস্তুতির মধ্যেই তিন আয়োজকের এহেন স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা তাই উপভোগ করতে মুখিয়ে আছে চিত্তরঞ্জন পার্কের অন্য পুজো কমিটিগুলি।
যে তিনটি পুজো কমিটির এই বছর ৫০ বছর পূর্তি, তারা হল সি আর পার্ক কো-অপারেটিভ গ্রাউন্ড, মেলা গ্রাউন্ড এবং বি ব্লক। কো-অপারেটিভ গ্রাউন্ডের পুজোতেই এই বছর তৈরি হচ্ছে সোনার কেল্লা। সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে যা আদতে আম-বাঙালির নস্টালজিয়া। সেই রোম্যান্টিসিজমেই এবার ভরসা রাখছেন কো-অপারেটিভ গ্রাউন্ডের পুজো উদ্যোক্তারা। কমিটির কোষাধ্যক্ষ লিপি চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ‘দিল্লির কারিগরদের দিয়ে সোনার কেল্লার থিম ফুটিয়ে তোলা কষ্টসাধ্য। তবে আমরা সেই দুঃসাহস দেখাচ্ছি।’ পুজো মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কেল্লার একটি জৈন মন্দিরের আদলে। চত্বরে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে সোনার কেল্লার আদল। সোনার কেল্লার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতেই ব্যবহার করা হচ্ছে হলুদ চুনাপাথরের রঙ। এমনকী প্রতিমাতেও ব্যবহার হবে সোনালি রঙের আভা। তবে সাবেকি।
সি আর পার্ক বি ব্লকের পুজোয় সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের থিম ‘মাটি খাঁটি’। মাটিই উৎস - এই ভাবনাকে মাথায় রেখেই পুজো মণ্ডপজুড়ে থাকছে মাটির ছোঁয়া। সাজসজ্জাতেও তাই। বি ব্লকের পুজোয় এবার উঠে আসবে নবদুর্গা। থাকবে বিশেষ গ্যালারিও। পুজো কমিটির বিগত ৫০ বছরের জার্নির দৃশ্যপট থাকবে সেখানে। পুজো কমিটির বিনোদন সম্পাদিকা গোপা বসু বলেন, ‘সর্বক্ষণ মণ্ডপে ৫০ হাজার মাটির প্রদীপ জ্বলবে। ভোগ বিতরণও করা হবে মাটির থালায়।’ সি আর পার্ক মেলা গ্রাউন্ডের পুজো অবশ্য বরাবরই ভোগ বিতরণে গুরুত্ব দেয় বেশি। ৫০ বছর পূর্তিতেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মণ্ডপ হচ্ছে মহিষাদল রাজবাড়ির আদলে। মণ্ডপেই তৈরি হচ্ছে ২২ ফুটের প্রতিমা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১০০ জন কারিগর এসে বিগত তিন মাস ধরে কাজ করছেন। কমিটির অর্গানাইজিং সেক্রেটারি নারায়ণ দে বলেন, ‘সাবেকিয়ানার সঙ্গে আপোস করি না।’
পকেট ফর্টি এবং কে ওয়ান ব্লকের সম্মিলিত পুজো নবপল্লির এবার ৩৩ বছর। এখানে মা দুর্গাকে নববধূর সাজ দেওয়া হচ্ছে। মণ্ডপ গড়ে উঠছে বিয়েবাড়ির সাজে। ব্যবহার হচ্ছে কুলো, আলপনা, গাছকৌটোর মতো সামগ্রী। এমনকী মায়ের মুকুটেও যেন বিয়ে বাড়ির সাজ। জানালেন পুজোর সাধারণ সম্পাদক সুমন চট্টোপাধ্যায়। ২৯ বছরে পদার্পণ করা সি আর পার্ক ডি ব্লকের পুজোয় অবশ্য উদযাপনই মুখ্য। সম্পাদক সুজয় ঘোষ বলেন, ‘একসঙ্গে বসে ভোগ খাওয়া কিংবা প্রবীণদের বাড়িতে তা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমেই উৎসব খুঁজে নিই আমরা। এর ব্যতিক্রম হবে না।’