নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ‘বেআইনি কিছু দেখলে পুরো প্রক্রিয়াই বাতিল করে দেব। সে নির্বাচন কমিশন যতই কাজ শুরু করে দিক না কেন!’ বিহারের ভোটার তালিকার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) মামলার শুনানিতে সোমবার এমনই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীকে পাশে রেখে একইসঙ্গে জানিয়ে দিলেন, এই মামলার রায় গোটা দেশের জন্যই কার্যকর হবে। পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে এসআইআর করানোর দাবিতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। মূল মামলার সঙ্গেই সেটিকে যুক্ত করেছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। জানানো হয়েছে, আগামী ৭ অক্টোবর ওই আবেদনের শুনানি হবে। ৭ এবং ৮ অক্টোবর দু’দিন এসআইআর মামলার চূড়ান্ত শুনানি। তারপরই রায়।
যদিও শুনানির দিন এগিয়ে আনার আবেদন করেন মূল আবেদনকারী সংস্থা এডিআর, ডেরেক ও’ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্র, যোগেন্দ্র যাদবদের আইনজীবীরা। তাঁদের দাবি, ৩০ সেপ্টেম্বর কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। অক্টোবরের মাঝামাঝিই নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হবে। আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে বিহারে সরকার গড়তে হবে। তাই চূড়ান্ত শুনানি এবং রায়ের দিনক্ষণ যদি এগিয়ে আনা যায়, তাহলে ভালো হবে। নাহলে নির্বাচন কমিশন গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলবে। দেশজুড়েও এসআইআর শুরু হয়ে যাবে। এডিআরের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘কমিশন নিয়ম লঙ্ঘন করছে। কেউ অভিযোগ জানালে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না।’ তখনই বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। আশা করি তারা নিয়ম কানুন মেনেই চলবে। কিন্তু যতই কাজ শুরু করুক, বেআইনি কিছু দেখলেই পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করে দেব।’
১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন এসআইআর প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বুলেটিন প্রকাশ করেছে কমিশন। তারপর থেকে বন্ধ। তা শুনে কমিশনের উদ্দেশে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর প্রশ্ন, ‘রোজ বুলেটিন দিতে অসুবিধে কোথায়?’ কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী জানান, ‘রোজ অত পরিসংখ্যান দেওয়া সম্ভব নয়। ১ অক্টোবর তো ফাইনাল তালিকা প্রকাশ হবেই।’ পাল্টা প্রশ্ন বিচারপতি বাগচীর, ‘পরিসংখ্যান নিয়ে এত অসুবিধা হলে আগে রোজ বুলেটিন দিচ্ছিলেন কীভাবে?’
এসআইআরে আধারকে প্রামাণ্য নথি হিসেবে মান্যতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যদিও সেই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন অশ্বিনী উপাধ্যায় নামে এক আইনজীবী। এদিন আদালতে তিনি বলেন, ‘আধার যখন জন্ম তারিখ এবং নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রই নয়, তাহলে কেন তা গ্রহণ করা হবে? আধার নকল হয়। আধারের সঙ্গে কমিশনের তালিকাভুক্ত ১১টি নথির কোনও একটি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিন।’ যদিও কোর্ট সেই যুক্তি উড়িয়ে দিয়েছে। বিচারপতি বাগচীর মন্তব্য, ‘আপনার আর্জি মানার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আধার নথি হিসেবে দেখানো যাবে। আর পাসপোর্ট, জন্ম শংসাপত্রও তো নকল হয়! তাহলে?’