৭ বছর আগে চুরির স্কুটার ‘হাতবদল’ তিনবার! বাইপাসে পাকড়াও চালক, যোগসূত্র সেই মল্লিকবাজার?
বর্তমান | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সবেমাত্র ‘লাল’ হয়েছে চিংড়িঘাটার সিগন্যাল। কালো রঙের স্কুটারটি তার তোয়াক্কা না করে আচমকা গতি বাড়িয়ে বেরিয়ে গেল। নজর এড়ায়নি ক্রসিংয়ে কর্তব্যরত বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের ট্রাফিক পুলিশের। স্কুটারটি আটকানোর জন্য দ্রুত তিনি বেলেঘাটা মেইন রোড ও ই এম বাইপাসের ক্রসিংয়ের উর্দিধারীকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বার্তা পাঠালেন। সেখানেই পাকড়াও করা হল ট্রাফিক বিধি ভঙ্গকারী স্কুটার চালককে। কিন্তু তখন কি আর ট্রাফিক পুলিস জানত, কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরবে! আইন ভাঙার কেস দিতে গিয়ে ট্রাফিক সার্জেন্টের হাতে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য! জানা গেল, সাত বছর আগে চুরি হয়ে যায় এই স্কুটার। থানায় অভিযোগও দায়ের হয় তখন। শুধু তাই নয়, গাড়ির রং বদল করে তিনবার কোনও কাগজপত্র ছাড়াই হাতবদল হয়েছে চুরি যাওয়া সেই স্কুটার। চালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।
ই এম বাইপাসের এই ঘটনায় প্রথমে স্কুটার চালকের থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির নথি দেখতে চান বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের দুই সার্জেন্ট শুভ্রকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুকান্ত বিশ্বাস। চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখালেও গাড়ির কোনও নথি দেখাতে ব্যর্থ হন। সার্জেন্টদের সন্দেহ হয়। তাঁরা বুঝতে পারেন, পুলিশের জরিমানা ফাঁকি দিতে ‘নকল’ নম্বরপ্লেট ব্যবহার করে স্কুটারটি চলছে। অথবা সেটি চুরি করা হয়েছে। এরপর স্কুটারের নম্বরপ্লেট যাচাই করেন কর্তব্যরত সার্জেন্ট। তাতেই সামনে আসে আসল ঘটনা। সরকারি পোর্টাল জানায়, স্কুটারটির আসল মালিক এই চালক নন। এটি চুরি হয়েছিল বেনিয়াপুকুর থেকে। ট্রাফিক পুলিশ তখন সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
জানা যায়, ২০১৮ সালে স্কুটারটি চুরি হয়। তখন এটির রং ছিল ধূসর। স্কুটারের মালিক সেই মর্মেই বেনিয়াপুকুর থানায় চুরির অভিযোগ করেন। সেই তথ্য পুলিশ মারফত পৌঁছে যায় পরিবহণ দপ্তরের কাছে। স্কুটারটির রেজিস্ট্রেশন ‘লক’ করে দেয় দপ্তর। অর্থাৎ, স্কুটারটি আর আইনত বিক্রি করা সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, স্কুটার বিক্রি করলে ক্রেতাকে মালিকানা পরিবর্তন করে তাঁর নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করানো বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ‘লক’ হয়ে যাওয়ায় তা আর সম্ভব নয়। বেলেঘাটায় আটক হওয়ায় ওই স্কুটারচালককে নিয়ে যাওয়া হয় বেনিয়াপুকুর থানায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, একটি গ্যারাজ থেকে বেআইনিভাবে তিনি স্কুটারটি কিনেছিলেন। তখন সেটি কালো রঙের ছিল। তবে সেখানে গাড়ির রং বদল হয়নি। পুলিশ সূত্রের দাবি, এই কাজ হয় মল্লিকবাজারে। তদন্তকারীদের অনুমান, চুরির স্কুটারটি প্রথমে যায় মল্লিকবাজারে। সেখানে রং বদলে গ্যারাজ মারফত বর্তমান স্কুটার চালকের কাছে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, কমপক্ষে তিনবার হাতবদল হয়েছে সেটির। তাহলে কি নম্বরপ্লেট বদলের অবৈধ কারবারের পাশাপাশি চুরির স্কুটার বিক্রিও চলছে মল্লিকবাজার এলাকায়? তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।