দেব গোস্বামী, বোলপুর: শান্তিনিকেতনের হস্তশিল্পীদের সোনাঝুরির খোয়াই হাট নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতীয় পরিবেশ আদালত। বনাঞ্চলে বাণিজ্যিক কাজকর্ম কীভাবে সম্ভব? জঞ্জাল, প্লাস্টিকের ব্যবহার, অপরিশোধিত তরল বজ্র পড়ে থাকা, গাছের ক্ষতি, গাছ কেটে ফেলা-সহ একাধিক বিষয় তুলে ধরে পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। তাঁর অভিযোগগুলিকেই জাতীয় পরিবেশ আদালতে হলফনামা দিয়ে কার্যত মান্যতা দিয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও বন বিভাগ।
সোমবার বোলপুরে এই বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি দাবি করেন, “বনদপ্তরের জায়গায় শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি হস্তশিল্পীদের হাট সম্পূর্ণ বেআইনি। বনদপ্তরের আইন অনুযায়ী বনাঞ্চলে বাণিজ্যিক কাজকর্ম করা যায় না। হাজার হাজার ব্যবসায়িক পসরা সাজিয়ে দোকান বসানোয় ব্যাহত হচ্ছে জঙ্গলের পরিবেশ।” তিনি আরও বলেন,”প্লাস্টিক, জঞ্জাল, অবাধে গাছ কেটে ফেলা, কংক্রিট দিয়ে গাছের গোড়া বাঁধিয়ে ফেলা-সহ পরিবেশবিধি প্রশ্নের মুখে। চলতি বছরের ১৪ নভেম্বর, এই মামলার রায় দেবে জাতীয় পরিবেশ আদালত।”
প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে স্থানীয় গুটিকয়েক আদিবাসী শিল্পী শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরির জঙ্গলে তাঁদের শিল্পকর্মের পসরা সাজিয়ে বসতেন৷ তাও শুধুমাত্র সপ্তাহে একটি দিন, শনিবার সেই দোকানপাট বসত। এই খোয়াই হাট বসিয়েছিলেন আশ্রমকন্যা শ্যামলী খাস্তগীর। পরবর্তী সময়ে এই হাটের পরিধি বাড়তে শুরু করে। ২০১৬-১৭ সাল থেকে এই হাট বৃহৎ আকার ধারণ করে। হু হু করে বাড়তে থাকে বহিরাগত ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও। খাতায়-কলমে ১৮০০ ব্যবসায়ী থাকলেও সমগ্র সোনাঝুরি জুড়েই বুধবার ছাড়া প্রতিদিনই প্রায় চার হাজার ব্যবসায়ী হাটে বসেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি চারচাকা গাড়ির দৌরাত্ম্যও আছে! অভিযোগ, একেবারে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে যায় প্রচুর সংখ্যায় গাড়ি। বন সুরক্ষা আইনকে উপেক্ষা করে শুধু যে বিকিকিনি চলে তা নয়, যথেচ্ছভাবে প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার ও সেসব ছড়িয়েছিটিয়ে ফেলার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। বনদপ্তরের তরফে মাঝেমধ্যে অভিযান চলে। সেসময় কয়েক দিন নিয়মকানুন মানা হয়। পরে ফের বেনিয়ম শুরু হয় বলে অভিযোগ।
পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত আরও বলেন,” রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ হলফনামায় উল্লেখ করেছে একাধিক রিসর্ট বনদপ্তরের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে। হোটেল ও রিসর্ট থেকে অপরিশোধিত নিয়মিত বর্জ্য জঙ্গলে ফেলা হয়। হোটেল বা রিসর্টে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কোনও ছাড়পত্রও নেই।” যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি, এই হাটকে কেন্দ্র করেই শান্তিনিকেতন সংলগ্ন স্থানীয় মহিলারা আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন। হাট পরিচালনা হচ্ছে বনদপ্তরের নিয়ম মেনেই।