এই সময়: ‘অপারেশন সিঁদুর’–এর জন্য সেনাকে একাধিকবার অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। পাকিস্তানের মাটিতে ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার সেই অপারেশনের ভূয়সী প্রশংসা করে আগামী দিনে দেশের তিন বাহিনীর আরও আধুনিকীকরণের বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কম্যান্ডের সদর দপ্তর, কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ম-এর বিজয় দুর্গে সোমবার ‘কম্বাইন্ড কম্যান্ডার্স কনফারেন্স’ (সিসিসি)-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সম্মেলনে মোদী বার্তা দেন যে, তিন বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে সরকার সব রকম ভাবে পাশে থাকবে।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিটি বাহিনীকে আত্মনির্ভর হওয়ার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। এ দিনের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, ভারতের সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল-সহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং তিন বাহিনীর পদস্থ আধিকারিকেরা।
এ দিন মোদী তাঁর ভাষণে প্রথমেই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের জন্য সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানান। গত মে মাসে কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ জনকে খুন করে জঙ্গিরা। তার পাল্টা পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা।
পাকিস্তানি সেনা এরপরে ভারতের সামরিক ও অসামরিক ক্ষেত্রে এয়ার স্ট্রাইক করলে সে দেশের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও কার্যত গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় বিমান বাহিনী। এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, নতুন প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আত্মনির্ভর ও উদ্ভাবনী উপায়ে কাজ করতে হবে। এ দিন তিনি মূলত প্রযুক্তির ব্যবহারে সামরিক দিকে থেকে দেশকে আরও শক্তিশালী করে তোলার বার্তা দেন।
সূত্রের খবর, এ দিন ‘ইন্ডিয়ান আর্মড ফোর্সেস ভিশন-২০৪৭’ নামের একটি কর্মসূচির সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এই পরিকল্পনা আগামী দিনে ভারতের সামরিক নীতি, আধুনিকীকরণ এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশের কাজ করবে। স্বাধীনতার ১০০ বছরে দেশের সামরিক ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়াই এই মিশন-এর লক্ষ্য। মোদী আরও বলেন যে, ‘গত দু’বছরে যা পরিবর্তন ও সংস্কার হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করেই আগামী দিনের কর্মসূচি ও স্ট্র্যাটেজি স্থির করতে হবে।’
সেনার আধুনিকীকরণ যাতে কোনও ভাবে শ্লথ না হয়ে পড়ে, সেনাকর্তাদের সেই বিষয়ে জোর দিতে বলেন তিনি। ভারতীয় সেনার কাছে যে সংখ্যক যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধজাহাজ রয়েছে, তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে জোর দেন তিনি। পাশাপাশি, ড্রোন প্রযুক্তি ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজার কথাও উঠে এসেছে তাঁর ভাষণে।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে, ‘শুধু যুদ্ধ পরিচালনাই নয়, দেশ নির্মাণেও সেনাবাহিনীর বড় ভূমিকা রয়েছে। জরুরি অবস্থায় পাশে দাঁড়ানো, বিদেশে মানবিক সহায়তা, নিরাপদ পরিবহণ-সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগেও উদ্ধারকার্যে সেনার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।’ তাঁর কথায়, ‘এই প্রেক্ষাপটে রাজনীতি নয়, দেশ ও সার্বভৌমত্বই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা হওয়া উচিত।’
বাহিনীর প্রধানদের উদ্দেশে মোদী বলেন, ‘২০২৫-কে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার ও পরিবর্তনের বছর হিসেবে ধরা হচ্ছে। এই বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির ক্ষমতা এবং দায়িত্ব আরও বাড়ানো হবে, যাতে যে কোনও ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও দ্রুত সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারে।’
সেই জন্যই এ বারের সম্মেলনের থিম হলো ‘ইয়ার অফ রিফর্মস— ট্রান্সফর্মিং দ্য ফিউচার’। সম্মেলন চলবে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সূত্রের খবর, সম্মেলনে যে সব বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা, তা হলো মাল্টি-ডোমেন যুদ্ধ পরিস্থিতি, বাহিনীর ক্ষমতাবৃদ্ধি এবং প্রতিরক্ষা খাতে গবেষণা ও উন্নয়ন বাড়ানোর বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরি।