ব্যাপক চাহিদা সত্ত্বেও নেই যোগান, রান্নাপুজো-বিশ্বকর্মা পুজোয় মায়ানমার এবং গুজরাটের ইলিশেই ভরসা বাঙালির...
আজকাল | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাজারে চাহিদা রয়েছে কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে যোগান নেই। তাই মায়ানমার ও গুজরাটের ইলিশের ওপরেই ভরসা রেখেছে বাঙালি। রান্না পুজো ও বিশ্বকর্মা পুজোতে প্রতি বছর বাজারে প্রচুর পরিমাণে ইলিশের চাহিদা থাকে। অন্যান্য বছরগুলিতে ইলিশের চাহিদা অনুযায়ী যোগান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলেও চলতি বছর খারাপ আবহাওয়ার জন্য বাংলার মৎস্যজীবীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলিশ পাননি। তাই বাজারে চাহিদা মেটানোর জন্য মায়ানমার ও গুজরাটের ইলিশই মূল ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সেখানেও বিপদ। মঙ্গলবার সকালে বাজারে গিয়ে ইলিশের দাম শুনে মধ্যবিত্ত ঘরের বাঙালির মাথা ঘুরে যেতে পারে। প্রথা অনুযায়ী রান্না পুজোতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ইলিশ।
এই পরিস্থিতিতে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণের ইলিশ না থাকার কারণে বড়সড় ক্ষতির মুখে মৎস্যজীবীরা। বাজারে যে পরিমাণ ইলিশ রয়েছে তার দাম কার্যত আকাশছোঁয়া। একটু বড় সাইজের ইলিশ মাছ কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের। এই বিষয়ে সুন্দরবন মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র জানান, ‘ইলিশের মরশুমে প্রথমের দিকে বড় সাইজের মাছের দেখা মিললেও পরবর্তীকালে সেই মাছের আর দেখা মেলেনি। প্রতিনিয়ত আবহাওয়া খারাপ আর তার কারণে সমুদ্রে মাছ ধরতে পারছে না মৎস্যজীবীরা’।
জানা যাচ্ছে, রান্নাপুজো ও বিশ্বকর্মা পুজোতে যে পরিমাণ ইলিশের চাহিদা থাকে, এই বছর ইলিশ মাছ তেমন অর্থে আসেইনি বাজারে। যে পরিমাণ হিমঘরে মজুত রাখা হয়েছে সেই পরিমাণ ইলিশ পর্যাপ্ত নয় চাহিদার অনুপাতে। ফলে ইলিশ কিনতে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা পকেট থেকে খসতে পারে মধ্যবিত্তের। বাজারে মায়ানমার ও গুজরাটের ইলিশ থাকলেও তা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। বাজারে ছোট পরিমাণে ইলিশ রয়েছে যার ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম তার বাজার দর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। ব্যবসায়ী অমল দাস জানান, ‘বাজারে ইলিশ মাছের চাহিদা রয়েছে কিন্তু যোগান নেই। তাই মধ্যবিত্তের ভরসা পোনা মাছ ও অন্যান্য মাছ। মৎস্যজীবীরা ভাল পরিমাণে মাছ না পাওয়ার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ট্রলার মালিকরাও’।
মৎস্যজীবী বিপুল দাস তিনি জানান, ‘একটি ট্রলার মাছ ধরতে গেলে কয়েক লক্ষ টাকার খরচা হয় কিন্তু সেই পরিমাণে মাছ আমরা পাচ্ছি না। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার কারণে বারে বারে নিম্নচাপ হচ্ছে। ফলে সমুদ্র থেকেই আমাদের মাছ না ধরে বন্দরে ফিরে আসতে হচ্ছে’। প্রাণ হরিদাস নামে এক মৎস্যজীবী জানান, ‘ইলিশের দেখা নেই। ফলে অন্যান্য মাছ নিয়েই বন্দরে ফিরে আসতে হচ্ছে আমাদেরকে। ইলিশ না থাকার কারণে মাছের দাম বাজারে পাচ্ছি না। আবহাওয়া খারাপের জন্য বেশিরভাগ সময় উপকূলেই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে’। তবে পুজোর আগে আবহাওয়ার উন্নতি হলে আবারও গভীর সমুদ্রে ইলিশের সন্ধানে পাড়ি দেবেন বলে জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা।
দেবাশিস আইয়ার নামে এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, ‘৩০০ গ্রাম ইলিশের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ইলিশের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। রান্না পুজোয় মাছের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য মধ্যবিত্তরা অন্যান্য মাছের ওপর বেশি ভরসা করছে’। ডায়মন্ড হারবার নগেন্দ্র বাজার মৎস্য আড়ৎতের মৎস্য ব্যবসায়ী জনয়ন হালদার বলেন, ‘১ কেজি ওজনের ইলিশ মাছের দাম ১৮০০ টাকা থেকে ২৪০০ টাকা পর্যন্ত। ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের মাছের দাম ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা। ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের মাছের দাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। হিমঘরে বিশ্বকর্মা পুজো ও রান্না পুজোর জন্য মায়ানমারের প্রচুর ইলিশ মজুত রাখা হয়েছে। মায়ানমারের ইলিশের প্রতি কেজি পিছু দাম যাচ্ছে ১২০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও বাজারে রয়েছে ভোলা মাছ। কেজি পিছু ভোলা মাছের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এছাড়া রয়েছে পমফ্রেট মাছ। কেজি পিছু দাম যাচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা’।