• মাঝরাতে আচমকাই মেঘভাঙা বৃষ্টি, দেরাদুনে ভেসে গেল বাড়িঘর-দোকানপাট, নিখোঁজদের সন্ধানে চলছে তল্লাশি
    আজকাল | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: মঙ্গলবার ভোররাতে আচমকাই প্রবল বৃষ্টিতে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে ঘটে গেল মেঘভাঙা বিপর্যয়। রাতের অন্ধকারে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ দুর্যোগে ভেসে গিয়েছে বাড়িঘর। বহু দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে গাড়িও। তাছাড়া, এখনও পর্যন্ত দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে প্রশাসন জানিয়েছে। মেঘভাঙার ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিখোঁজদের সন্ধানে চলছে তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান। খবর পেয়ে জেলা শাসক সাভিন বংশল, এসডিএম কুমকুম জোশি এবং অন্যান্য আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। জেলা শাসক উদ্ধারকর্মীদের দ্রুত নিখোঁজদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। মএনডিআরএফ, এসডিআরএফ, পিডব্লিউডি-সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীরা বুলডোজার নিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। এদিন ভারী বৃষ্টির কারণে দেরাদুনে সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা শাসক।

    উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জানিয়েছেন, তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং পরিস্থিতি স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করছেন। এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘দেরাদুনে গত রাতে প্রবল বর্ষণে কিছু দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসন, এসডিআরএফ ও পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে নেমেছে। আমি নিজে বিষয়টির উপর নজর রাখছি’। মেঘভাঙার পর ঋষিকেশে চন্দ্রভাগা নদী সকাল থেকেই উচ্ছ্বসিত। নদীর জল রাস্তায় ঢুকে পড়ায় তিনজন মাঝপথে আটকে পড়েন। পরে এসডিআরএফের দল তাঁদের উদ্ধার করে। অন্যদিকে, পিথোরাগড় জেলায় ভারী ভূমিধসে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রশাসন যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা খুলে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে’।

    উল্লেখ্য, প্রবল বর্ষণ, মেঘভাঙা আর ভূমিধসে এই বছরের বর্ষায় ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ডের একাধিক এলাকা বিপর্যস্ত। উত্তরকাশীর ধরালি-হরশিল, চামোলির থারালি, রুদ্রপ্রয়াগের চেনাগাড়, পাউরির সেঁজি, বাগেশ্বরের কাপকোট ও নৈনিতালের একাধিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বছরের এপ্রিল থেকে উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ১২৮ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ৯৪ জন। এর আগে, গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তরাখণ্ড সফরে দেরাদুনে এসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ পর্যালোচনা করেন। তিনি বিপর্যস্ত অঞ্চলের জন্য ১,২০০ কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে এই মরশুমে টানা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতি, মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং বিধ্বস্থ জনজীবনের সাক্ষী থেকেছে।

    কিছুদিন আগে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। থারালি বাজার, কোটদীপ ও থারালি তহসিল কমপ্লেক্সে জল ও কাদামাটির স্রোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর স্থানীয় সূত্রে। বহু বাড়িঘর, এসডিএমের বাসভবন এবং অন্যান্য সরকারি ভবনও ক্ষতির মুখে পড়েছে। অন্যান্য জায়গার ধ্বংসাবশেষ ঢুকে গিয়েছে সরকারি ভবনগুলিতে। তহসিল কমপ্লেক্সে পার্ক করা একাধিক গাড়ি কাদামাটির নিচে চাপা পড়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শহরের রাস্তাগুলি মুহূর্তের মধ্যেই পরিণত হয়েছে পুকুরে। সংলগ্ন সাগওয়ারা গ্রামে এক কিশোরী কাদামাটির নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ বলে আশঙ্কা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ব্যাপক বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। ইতিমধ্যেই

    উদ্ধার ও ত্রাণকাজ শুরু করেছে পুলিশ ও প্রশাসন। চেপডাউন বাজারের বেশ কিছু দোকানও ধ্বংসস্তূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘চামোলির থারালি এলাকায় মেঘভাঙার দুঃখজনক খবর পাওয়া গিয়েছে। জেলা প্রশাসন, এসডিআরএফ ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজে নেমেছে। আমি নিয়মিত স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং পরিস্থিতি নিজে পর্যবেক্ষণ করছি। সবার নিরাপত্তার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি’। থারালি-গোয়ালডাম সড়ক মিংগেডেরা অঞ্চলে ধ্বংসস্তূপ ও প্রবল বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি থারালি-সাগওয়ারা রুটও অবরুদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় যাতায়াত ব্যাহত। বহু গাড়ি জল ও কাদামাটির স্রোতে ভেসে গিয়েছিল।
  • Link to this news (আজকাল)