পা ছুঁয়ে প্রণাম করেনি কেন?, স্কুলের মধ্যেই পড়ুয়াদের বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর শিক্ষিকার, হাসপাতালে ভর্তি ৩১ জন
আজকাল | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্কুলের মধ্যে পরপর পড়ুয়াকে উত্তম-মধ্যম দিলেন শিক্ষিকা। অবাধ্যতার জন্য নয়। স্কুলে এসেই কেন শিক্ষিকার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেনি তারা, এই হল তাদের অপরাধ। সেই অপরাধে বেধড়ক মারধর করেন ওই পড়ুয়াদের। যে ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অভিভাবকরা।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষিকার নাম, সুকান্তী কর। ওই জেলার এক সরকারি স্কুলে ৩১ জন পড়ুয়াকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। কারণ কী? স্কুলে সকালে প্রার্থনার পর ওই পড়ুয়ারা অভিযুক্ত শিক্ষিকার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেনি।
ওই ব্লকের এডুকেশন অফিসার বিপ্লব কর জানিয়েছেন, 'সেদিন স্কুলে সকালে প্রার্থনার পর সব পড়ুয়াই নিজেদের ক্লাসে চলে গিয়েছিল। শুধুমাত্র ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন পড়ুয়াকে ডেকে পাঠানো হয়। কেন প্রার্থনার পর পড়ুয়ারা শিক্ষিকার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেনি, তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি।' সেই সময় যে সকল পড়ুয়ারা শিক্ষিকার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেনি, তাদের বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন তিনি।
গুরুতর আহত অবস্থায় বাড়ি ফিরেই পড়ুয়ারা শিক্ষিকার বিরুদ্ধে নালিশ জানায়। তড়িঘড়ি করে আহত পড়ুয়াদের বেটনটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পাশাপাশি আহত পড়ুয়াদের অভিভাবকরা স্কুলে এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার আর্জি জানান।
বিপ্লব কর জানিয়েছেন, অভিভাবকদের অভিযোগের পরেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পূর্ণচন্দ্র ওঝা খবরটি জানান। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা ওই স্কুলে পৌঁছন। আহত পড়ুয়াদের সঙ্গেও দেখা করেন। অবশেষে ওই অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে ওড়িশার আরও এক স্কুলে বিপত্তি ঘটে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার কেওনঝড়ে। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার স্কুলের মধ্যে ভুলবশত আটকে পড়ে ওই খুদে পড়ুয়া। পরিবারের তরফে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে গিয়েছিল দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রী। কিন্তু বিকেল চারটে বেজে যাওয়ার পরেও সে আর বাড়ি ফেরেনি।
সরকারি স্কুলের এক কর্মী স্কুল, ক্লাসরুমের দরজা বন্ধ করে চলে যান। কিন্তু তিনি দেখেননি আট বছর বয়সি ছাত্রী তখনও একটি ক্লাসরুমে বসে আছে। তিনি না দেখেই ঘর বন্ধ করে চলে যান। বিকেলের পর থেকে পরিবারের সদস্যরা খুদে ছাত্রীর খোঁজ শুরু করেন। রাতভর তার খোঁজ করেন এলাকায়।
এদিকে কিছুক্ষণ পর ওই ছাত্রী খেয়াল করে, স্কুলের দরজা বন্ধ। বেরোনোর আর উপায় নেই। ভয়ে, আতঙ্কে ক্লাসরুমেই চিৎকার শুরু করেন। তবে কেউ তার চিৎকার শুনতে পাননি। বাড়ি যাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে সে। এরপর ক্লাসরুমের জানলা দিয়েই বেরোনোর চেষ্টা করে। তখনই ক্লাসরুমের জানলার গরাদ দিয়ে কোনও মতে বেরিয়ে যাওয়ার প্রাণপণে চেষ্টা চালায়। তখনই ঘটে বিপত্তি। ওই জানলার গরাদে আটকে যায় ছাত্রীর মাথা।
জানা গেছে, ছাত্রীর নাম জোৎস্না দেহুরি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ওই জানলার গরাদে আটকে ছিল খুদে ছাত্রীর মাথা। জানা গেছে, কেওনঝড় জেলার বনস্পাল ব্লকের সরকারি উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। শুক্রবার সকালে স্কুলের রাঁধুনি দরজা খুলে ভিতরে ঢোকেন। তিনিই প্রথম খুদে ছাত্রীকে ওই অবস্থায় দেখতে পান।
তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় গ্রামবাসীদের ও ছাত্রীর পরিবারকে। দ্রুত তাঁরা স্কুলে পৌঁছন। গরাদটি আরও খানিকটা ফাঁকা করে ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। দ্রুত ছাত্রীকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের তরফে জানা গেছে, ছাত্রীর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। তবে এখনও সে আতঙ্কিত। অন্যদিকে এই ঘটনাটি ঘিরে জেলায় ব্যাপক শোরগোল পড়ে। জেলা শিক্ষা আধিকারিক বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। এরপর ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌরহরি মাহান্তকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।