আজকাল ওয়েবডেস্ক: সেপ্টেম্বর অর্ধেক পেরিয়ে গিয়েছে। বর্ষা বিদায়ের সময়েও রাজ্যে রাজ্যে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতি। প্রবল বর্ষণের মাঝেই মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যাচ্ছিল বড় দুর্ঘটনা। রাঁচির যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তা দেখেই আঁতকে উঠছেন সাধারণ মানুষ।
যদিও ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি আজকাল ডট ইন। তবে সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, ওই ভিডিও ফুটেজ রাঁচির। ওই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ছাতা মাথায় এক মহিলা হেঁটে যাচ্ছিলেন। আচমকা ধসে পড়ে তাঁর ডানদিকের একটি আস্ত দেওয়াল। মহিলা মুহূর্তের মধ্যে অল্প সরে যাওয়ায়, প্রাণে বেঁচে যান। জানা গিয়েছে, শিউরে ওঠা ওই ঘটনা ঘটেছে সোমবার সন্ধেয়। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পরেই, অনেকেই সেখানে কমেন্ট করেন, ভাগ্যের জোরেই ওই মহিলা বেঁচে গিয়েছেন।
রাঁচি-সহ ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু অংশে গত কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) উত্তর-মধ্য এবং সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিচ্ছিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। রাজ্যের বিচ্ছিন্ন স্থানে ঝোড়ো হাওয়া-সহ বজ্রপাত এবং দমকা হাওয়ার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে। রবিবার বিকেল থেকে রাঁচিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে টানা। রবিবার সকাল ৮.৩০টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় শহরে ৪০.৮ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে তথ্য হাওয়া অফিসের।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঝাড়খণ্ডে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যেখানে ওই রাজ্যে এই সময়কালে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়া উচিত ৯২০.৮ মিমি, সেখানে হয়েছে ১,১০০.৫ মিমি বৃষ্টিপাত। পূর্ব সিংভূম জেলায় সর্বোচ্চ ৫৯ শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার ভোররাতে আচমকাই প্রবল বৃষ্টিতে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে ঘটে গেল মেঘভাঙা বিপর্যয়। রাতের অন্ধকারে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ দুর্যোগে ভেসে গিয়েছে বাড়িঘর। বহু দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে গাড়িও। তাছাড়া, এখনও পর্যন্ত দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে প্রশাসন জানিয়েছে। মেঘভাঙার ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিখোঁজদের সন্ধানে চলছে তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান। খবর পেয়ে জেলা শাসক সাভিন বংশল, এসডিএম কুমকুম জোশি এবং অন্যান্য আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। জেলা শাসক উদ্ধারকর্মীদের দ্রুত নিখোঁজদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, পিডব্লিউডি-সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীরা বুলডোজার নিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। এদিন ভারী বৃষ্টির কারণে দেরাদুনে সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা শাসক।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জানিয়েছেন, তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং পরিস্থিতি স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করছেন। এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘দেরাদুনে গত রাতে প্রবল বর্ষণে কিছু দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসন, এসডিআরএফ ও পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে নেমেছে। আমি নিজে বিষয়টির উপর নজর রাখছি’। মেঘভাঙার পর ঋষিকেশে চন্দ্রভাগা নদী সকাল থেকেই উচ্ছ্বসিত। নদীর জল রাস্তায় ঢুকে পড়ায় তিনজন মাঝপথে আটকে পড়েন। পরে এসডিআরএফের দল তাঁদের উদ্ধার করে। অন্যদিকে, পিথোরাগড় জেলায় ভারী ভূমিধসে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রশাসন যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা খুলে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে’।
উল্লেখ্য, প্রবল বর্ষণ, মেঘভাঙা আর ভূমিধসে এই বছরের বর্ষায় ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ডের একাধিক এলাকা বিপর্যস্ত। উত্তরকাশীর ধরালি-হরশিল, চামোলির থারালি, রুদ্রপ্রয়াগের চেনাগাড়, পাউরির সেঁজি, বাগেশ্বরের কাপকোট ও নৈনিতালের একাধিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বছরের এপ্রিল থেকে উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ১২৮ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ৯৪ জন। এর আগে, গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তরাখণ্ড সফরে দেরাদুনে এসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ পর্যালোচনা করেন। তিনি বিপর্যস্ত অঞ্চলের জন্য ১,২০০ কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে এই মরশুমে টানা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতি, মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং বিধ্বস্থ জনজীবনের সাক্ষী থেকেছে।