নোংরা জলে সাঁতার কাটলেই বিপদ! ঘিলুখেকো অ্যামিবায় মৃত্যু ১৮ জনের, আতঙ্কে কাঁপছে কেরল ...
আজকাল | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: আবারও কেরলে ঘিলুখেকো অ্যামিবা সংক্রমণের জেরে উচ্চ সতর্কতা জারি হল। চলতি বছরে কয়েক মাসের মধ্যে রাজ্য জুড়ে ঘিলুখেকো অ্যামিবার সংক্রমণে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৬৭ জন। মৃতদের তালিকায় একাধিক নাবালিকাও রয়েছে।
ঘিলুখেকো অ্যামিবার সংক্রমণ হু হু করে ছড়াতেই উচ্চ সতর্কতা জারি করেছেন কেরলের স্বাস্থ্য মন্ত্রী বীণা জর্জ। এই পরিস্থিতিতে নোংরা, অপরিষ্কার পুকুরে স্নান, কুয়োর জল পান, স্নান করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। অপরিষ্কার পুকুরে সাঁতার কাটা থেকেও স্থানীয়দের বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রতিটি সুইমিং পুল পরিচ্ছন্ন রাখার জন্যেও নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। বাড়ির জলের ট্যাঙ্ক, কুয়ো পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ঘিলুখেকো অ্যামিবার সংক্রমণের উপসর্গ দেখা গেলে, তড়িঘড়ি যথাযথ চিকিৎসার আওতায় আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ১৭ বছর বয়সি এক পড়ুয়ার শরীরে ঘিলুখেকো অ্যামিবার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সে তিরুবনন্তপুরমের বাসিন্দা। অক্কুলাম পর্যটন কেন্দ্রে একটি পুকুরে স্নান করেছিল সে। ওই পড়ুয়ার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। পাশাপাশি ওই পুকুরে স্নান করা ও সাঁতার কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ব্রেন ইটিং অ্যামিবার সংক্রমণের উপসর্গ কী কী?
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নাকের মধ্যে দিয়ে ব্রেন ইটিং অ্যামিবা শরীরে প্রবেশ করে। এর কিছুদিনের মধ্যেই গলা ব্যথা, ঝিমুনি ভাব, মাথা যন্ত্রণা, ঘনঘন বমি, ঘাড়ে যন্ত্রণা, জ্বর, হাঁচির মতো একাধিক উপসর্গ দেখা দেয়। এবং স্বাদ ও গন্ধ অনেক সময় পাওয়া যায় না। তিন থেকে সাতদিনের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা যায় এবং মৃত্যু হয়। এই ধরনের অ্যামিবা পুকুর, লেক, নদী ও কুয়োর দূষিত জলে পাওয়া যায়।
চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন, নাবালিকার মৃত্যুর পর গত ১৫ আগস্ট কোঝিকোড়ে মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষার পরেই জানা গেছে, ব্রেন ইটিং অ্যামিবার সংক্রমণে নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে। যার জেরে রাজ্য জুড়ে আবারও আতঙ্ক ছড়ায়।
চলতি বছরে গত জুলাই মাসে কেরলের এই জেলাই এখনও পর্যন্ত ব্রেন ইটিং অ্যামিবার সংক্রমণে আটজনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। একই রোগে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও দু’জন কেরলের বাসিন্দা। তিন মাসের এক শিশুও আক্রান্ত। তিনটি ঘটনাই কোঝিকোড় জেলার। বর্তমানে একাধিক সদ্যোজাত শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এই সংক্রমণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অনেকেরই শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে ভারতে প্রথমবার ব্রেন ইটিং অ্যামিবার আক্রান্তের ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছিল। ২০১৬ সালে কেরলে প্রথমবার এই রোগ ধরা পড়ে। গতবছর, ২০২৪ সালে শুধুমাত্র কেরলেই ৩৬ জন ঘিলু খেকো অ্যামিবা আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ন’জনের। চলতি বছরেও ক্রমেই বাড়ছে ঘিলু খেকো অ্যামিবার সংক্রমণের সংখ্যা। যা ঘিরে দুশ্চিন্তার ভাঁজ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে।