• কাদায় ভরা রাস্তা, এল না অ্যাম্বুল্যান্স, মাঝ রাস্তায় সন্তান প্রসব তরুণীর, এই রাজ্যে ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামবাসীরা ...
    আজকাল | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: গ্রামে রাস্তাই নেই। প্রবল বৃষ্টিতে কাদায় ভরে উঠেছে সব পথ। যেখান থেকে পায়ে হেঁটে যাওয়াই কষ্টকর। সেই পথে আর ঢুকল না অ্যাম্বুল্যান্স। অ্যাম্বুল্যান্স না আমি আসায়, বাড়ি থেকে ডোলিতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল গর্ভবতীকে। সেই কাদায় ভরা পথ পেরিয়ে গেলেন অন্তঃসত্ত্বা তরুণী। মাঝ পথেই সন্তান প্রসব করলেন তিনি। 

    সন্তান প্রসবের আগে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন তরুণী। হেঁটে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না তাঁর। শেষমেশ তাঁর 'ডোলি'তে করে নিয়ে যাওয়া হল। তবে এই 'ডোলি' পালকির মতো সুরক্ষিত নয়। রীতিমতো বাঁশের লাঠিতে, কাপড়ের মধ্যে ঝুলতে ঝুলতে কয়েক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেন তিনি। 

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে তেলেঙ্গানার ভদ্রদ্রি কোথাগুদেম জেলায়। প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন তিনি। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স না আসায় ওই রাস্তা দিয়েই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাঁকে‌। যন্ত্রণা আরও বাড়তে মাঝ রাস্তাতেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। 

    এর কিছুক্ষণ পর একটি অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছয়। সেই অ্যাম্বুল্যান্সে করে তরুণী ও সদ্যোজাত সন্তানকে সত্যনারায়ণপুরম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে মা ও সদ্যোজাত সন্তান দুজনেই স্থিতিশীল রয়েছে। 

    প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসেই এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। 

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের সিধি জেলায়। জানা গেছে, সিধি জেলায় বারিগওয়ান গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। এই গ্রামে মূলত আদিবাসীদের বসবাস।‌ সবমিলিয়ে ৭০টি পরিবার থাকে। আদিবাসী তরুণীর নাম, প্রীতি রাওয়াত। 

    প্রতি বছর বর্ষায় চরম ভোগান্তির শিকার হন বারিগওয়ান গ্রামের বাসিন্দা। মূল সড়ক থেকে গ্রাম পর্যন্ত কোনও পাকা রাস্তা নেই। প্রবল বৃষ্টির জেরে নদীর জলে জলমগ্ন হয়ে পড়ে গ্রামটি। কাদায় ভরে যায় গ্রামের সব পথ। স্কুল, কলেজ, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছতে ব্যাপক কসরৎ করতে হয় এই গ্রামের বাসিন্দাদের। এমনকী পড়ুয়ারাও নিত্যদিন জীবন বাজি রেখে, পরিশ্রম করেই স্কুলে পৌঁছয়। বিশেষত, গুরুতর কেউ অসুস্থ হলে, সন্তান প্রসবের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে। 

    দিন কয়েক আগে বাড়িতেই প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করেন প্রীতি। দ্রুত খবর দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্সে। সময় মতো অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছেও যায় গ্রামের কাছে। কিন্তু মূল সড়ক থেকে গ্রামের মধ্যে অ্যাম্বুল্যান্সটি ঢুকবে না বলে জানিয়ে দেন চালক। কাদায় একবার গাড়ির চাকা বসে গেলে, বিপত্তি বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে গ্রামে অ্যাম্বুল্যান্স চলাচল করতে পারবে না বলে জানান চালক। 

    এরপর প্রীতিকে 'ডোলি'তে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন পরিবারের সদস্যরা। একটি বাঁশের লাঠিতে দড়ি দিয়ে নিচে একটি কাপড় ঝোলানো হয়। সেই কাপড়ের মধ্যে ঝুলতে ঝুলতে দুই কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মূল সড়কে অ্যাম্বুল্যান্সে গিয়ে ওঠেন প্রীতি। হাসপাতালে যাওয়ার আগে অ্যাম্বুল্যান্সেই সন্তান প্রসব করেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মা ও সন্তান দু'জনেই সুস্থ রয়েছে। বর্তমানে সেমরিয়া হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। 

    চিফ মেডিক্যাল অ্যান্ড হেল্থ অফিসার ড. ববিতা খারে জানিয়েছেন, অ্যাম্বুল্যান্স সময় মতো পৌঁছেও গ্রামের মধ্যে ঢুকতে পারেনি। পাকা রাস্তা না থাকার জন্যেই সমস্যা হয়। মূল সড়কে অ্যাম্বুল্যান্সটি অপেক্ষা করছিল। ঘটনাটি ঘিরে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন সমাজকর্মীরা। তাঁদের দাবি, পরিবারের সদস্যরা সময়মতো তরুণীকে নিয়ে রওনা না দিলে, মা ও সন্তানের মৃত্যু হতে পারত। রাজ্য সরকারের গাফিলতিতে অন্তঃসত্ত্বাদের জীবন এখন বিপন্ন। 
  • Link to this news (আজকাল)