অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: ব্যস্ত অফিস টাইমে হাওড়া মেট্রো স্টেশনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এক যাত্রী। অভিযোগ, স্টেশনে তেমন কোনও চিকিৎসা পরিষেবা মেলেনি। ওই ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট হলেও অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হয়নি। অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও মাস্ক ছিল না বলে অভিযোগ। প্রায় ৪৫ মিনিট বিনা চিকিৎসাতে হাওড়া মেট্রো স্টেশনেই পড়েছিলেন ওই ব্যক্তি! পরে হাওড়া জেলা হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা ওই ব্যক্তিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত ব্যক্তির নাম বিশ্বজিৎ পাকড়াশি, বাড়ি হুগলির ত্রিবেণীতে। তিনি রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎদপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে ছিলেন। কেন মেট্রো স্টেশনে নূন্যতম চিকিৎসা পরিষেবা মিলল না? সেই প্রশ্ন উঠেছে।
বউবাজারের টানেলের পথ খুলে যাওয়ায় অতি সম্প্রতি হাওড়া থেকে সল্টলেক পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা শুরু হয়েছে। তিন মেট্রো রুটের সূচনা করতে কলকাতায় এসেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হাওড়া মেট্রো স্টেশন অন্যতম ব্যস্ত স্টেশন হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ মেট্রোপথের সওয়ারি হচ্ছেন। আরও উন্নতমানের পরিষেবার কথাও জানানো হয়েছে। সেখানে স্টেশনে কেন কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকল না? কেন একজন সহনাগরিকের প্রাণ এভাবে চলে যাবে? সেই প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি ডব্লুবিইসিডিসিএল-এর কর্মী। সল্টলেকের বিদ্যুৎভবনে তিনি কর্মরত। অফিস যাওয়ার জন্য লোকাল ট্রেনে ত্রিবেণী থেকে প্রতিদিন হাওড়া রেল স্টেশনে নামেন বিশ্বজিৎ পাকড়াশি। সম্প্রতি, হাওড়া থেকে সল্টলেক পর্যন্ত মেট্রো রেল পরিষেবা চালু হয়ে গিয়েছে। হাওড়া থেকে মেট্রোতেই তিনি ইদানীং সল্টলেকের অফিসে যাচ্ছিলেন। অন্যান্য দিনের মতো এদিনও সকালে তিনি হাওড়া স্টেশনে নেমেছিলেন। পরে মেট্রো ধরার জন্য তিনি হাওড়া মেট্রো স্টেশনে লিফটে করে প্লাটফর্মে যাচ্ছিলেন বলে খবর। জানা গিয়েছে, ওই লিফটের মধ্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
জানা গিয়েছে, বিশ্বজিৎ পাকড়াশির এক সহকর্মী মেট্রো স্টেশন দিয়েই অফিস যাচ্ছিলেন। তিনিই দেখতে পান বিশ্বজিৎ পাকড়াশি লিফটের মধ্যে অসুস্থ হয়ে আছেন। অন্যান্য যাত্রীরা তাঁকে ঘিরে আছেন। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে স্টেশনেরই একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। বারবার চিৎকার করা সত্ত্বেও মেট্রো স্টেশনের তরফে কোনও সাহায্য প্রথমে মেলেনি বলে অভিযোগ। এদিকে ওই ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। শেষপর্যন্ত হাওড়া মেট্রো রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষের তরফে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা হয়েছিল। অভিযোগ, সেই অক্সিজেন দেওয়ার জন্য মাস্ক ছিল না। সাহায্যের জন্য কোনও পুলিশকেও পাওয়া যায়নি। অভিযোগ, এই অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় প্রায় ৪৫ মিনিট স্টেশনেই পড়েছিলেন বিদ্যুৎদপ্তরের ওই কর্মী। মেট্রো স্টেশন কর্তৃপক্ষের তরফে একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও করা হয়নি!
শেষপর্যন্ত একটি গাড়ি করে ওই অসুস্থ ব্যক্তিকে হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবর পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়। কেন হাওড়া মেট্রো স্টেশনে সামান্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও থাকল না? কেন অক্সিজেন মাস্ক ছিল না? সেসব প্রশ্ন উঠেছে। জিৎবাবুর পরিবারের তরফে অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক আত্মীয় হাওড়ায় আসেন। তিনি বলেন, ‘‘অন্যান্য দিনের মতো এদিনও সকাল সোয়া ৭টা নাগাদ ত্রিবেণীর বাড়ি থেকে বেরোন বিশ্বজিৎ। তারপর একটু বেলায় বিশ্বজিতের সহকর্মীরা ঘটনার কথা বলে আমাদের বাড়িতে খবর দেয়। মেট্রো কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্যই বিশ্বজিতের এমন পরিণতি হল। আমরা মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছি।’’
এদিকে হাওড়া স্টেশন মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁদের গাফিলতি সম্পর্কে কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে কর্তৃপক্ষের তরফে এটুকু জানানো হয়েছে, সাড়ে ৯টায় ওই ব্যক্তিকে অচৈতন্য অবস্থায় স্টেশনের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কর্তৃপক্ষের তরফে নিরাপত্তারক্ষীরা ওই ব্যক্তিকে ৯টা ৩৮ মিনিটের মধ্যে হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। রাস্তাতেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে দাবি মেট্রো কর্তৃপক্ষের।