‘এমন বৃষ্টিপাত ৩০ বছরে দেখিনি’, মন্তব্য দেরাদুনের জলমগ্ন মন্দিরের পুরোহিতের
বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দেরাদুন: দূর থেকে দেখে মনে হবে, পাহাড়ের গা বেয়ে সহস্র জলধারা নেমে এসেছে। সেই দৃশ্য দেখতে দলে দলে ভিড় জমাতেন পর্যটকরা। সোমবারের মেঘভাঙা বৃষ্টিতে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দেরাদুনের এই সহস্রধারা ফলস। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা জলধারা এখন রাস্তা দিয়েই বইছে। শুধু সহস্রধারা নয়, লাগাতার বৃষ্টিতে তপোবন, আইটি পার্ক সহ দেরাদুন শহরের বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গিয়েছে রায়পুর, মালদেবতার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, কেবল সহস্রধারায় এক দিনে ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে একাধিক বাড়ি, হোটেল এবং রাস্তার। একটি ব্রিজও সম্পূর্ণ ভেসে গিয়েছে।
বৃষ্টিতে জল বেড়েছে তমসা নদীর। তার প্রভাব পড়েছে নদী তীরবর্তী তপকেশ্বর মন্দিরে। পাহাড়ের এক গুহার মধ্যে এই মন্দিরের আরাধ্য শিবলিঙ্গটি রয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে সেটিও ডুবেছে। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বিপিন যোশির কথায়, ‘গত ২৫-৩০ বছরে এমন ভয়ঙ্কর বৃষ্টি দেখিনি।’ সোমবার বৃষ্টির সময় মন্দিরে ছিলেন স্থানীয় কয়েকজন। তাঁদের দাবি, ‘ভোর ৫টা নাগাদ আচমকা ভয়ানক বৃষ্টি শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই গুহায় জল ঢুকতে শুরু করে এবং তা বাড়তে বাড়তে শিবলিঙ্গ অবধি পৌঁছে যায়। কোনওক্রমে প্রাণ নিয়ে ফিরেছি।’ জলের তলায় দেরাদুনের আইটি পার্ক এলাকা। শহরের একাধিক অফিসের ঠিকানা এই চত্বর। বৃষ্টির সময় এখানেই আটকে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ঋত্বিক শর্মা। বৃষ্টির ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভোর থেকে বাড়ির বাইরে আটকে রয়েছি। চারিদিকে জল থই থই করছে। রাতভর রাস্তায় জলের মধ্যেই পড়ে আছে গাড়ি। অর্ধেক ডুবে গিয়েছে। অফিসের বেসমেন্টেও জল ঢুকেছে।’ একা ঋত্বিক নন, বৃষ্টির সময় বাড়ির বাইরে ছিলেন অন্তত ৫৮২ জন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েন তাঁরা। কয়েক ঘণ্টা কেউ বাড়ি ফিরতে পারেননি। পরে উদ্ধার করা হয় তাঁদের। বিপর্যয় প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেন, ‘গত রাতের ভারী বৃষ্টিতে প্রায় সব নদীই উত্তাল হয়ে উঠেছে। অনেক জায়গায় মেঘ ভাঙা বৃষ্টিও হয়েছে। প্রায় ২৫-৩০টি জায়গার রাস্তা সম্পূর্ণরূপে ভেসে গেছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন।’ তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে রাজ্যের বিপর্যয় পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে।