• বিপর্যস্ত দেরাদুনও, মৃত ১৩, প্রকৃতির রোষ পাহাড় ছেড়ে সমতলমুখী
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: উত্তরাখণ্ডে দেবভূমিতে এতদিন জনজীবন, পরিকাঠামো, বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মানুষের প্রাণ স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে পাহাড়ের উপরের মেঘভাঙা বৃষ্টি। স্তব্ধ হয়েছে চারধাম যাত্রা। মৃত্যু যত হয়েছে, তার থেকেও বেশি মানুষ স্রোতে ভেসে নিখোঁজ। এবার পালা সমতলের! কারণ, কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, হেমকুণ্ড সাহিব, উত্তরকাশীজুড়ে ধ্বংসলীলার পর প্রকৃতির রোষ এখন সমতলমুখী। সোমবার রাতে শুরু হওয়া আচমকা দুর্যোগে কুমায়ুন ও গাড়োয়াল—দু’দিকেই আছড়ে পড়েছে মেঘভাঙা বৃষ্টি, নদীর জলোচ্ছ্বাস, হড়পা বান। সেই আক্রোশ পৌঁছেছে দেরাদুনেও। সহস্রধারায় মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে নদীস্রোত ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। ভাসিয়ে দিয়েছে একঝাঁক হোটেল, বাড়ি, স্কুল। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দেরাদুনে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। নিখোঁজ ১৬। তমসা নদীর জল রাস্তাঘাট, লোকালয় ভাসিয়ে দেরাদুনের সবথেকে জাগ্রত টপকেশ্বর মহাদেবের মন্দির পর্যন্ত ডুবিয়ে দিয়েছে। বিরাটাকার হনুমান মূর্তি জলের নীচে। এতেই তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে দেবভূমে। কারণ, এই মন্দিরের পুরোহিত ও আশ্রমের সন্ন্যাসীদের বক্তব্য, মন্দির ও হনুমানজির এই অবস্থা আজ পর্যন্ত হয়নি।  এটা কুলক্ষণ নয় তো? নবরাত্রির প্রাক্কালে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় কেন থামছে না? সহস্রধারার আশেপাশে ধসের স্তূপে আটকে বহু শ্রমিক। এনডিআরএফ চেষ্টা চালাচ্ছে উদ্ধারের। দেরাদুনের দেবভূমি ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ পড়ুয়া ও শিক্ষকরা। 

    কয়েক সপ্তাহ আগে হরিদ্বার থেকে দেরাদুন যাওয়ার রেলপথ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল মনসা পাহাড়ের ধসে। এবার বন্ধ দেরাদুন থেকে মুসৌরি যাওয়ার রাস্তা। এখানেই শেষ নয়। চন্দ্রভাগার জল আর হৃষিকেশের রাস্তা মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে। ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে বহু গাড়ি। হরসিল, চামোলি, রুদ্রপ্রয়াগ, পাউরি এবং বাগীশ্বরীর পর সোমবারের প্রকৃতিরোষ আছড়ে পড়েছে নৈনিতালেও। জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হিমাচলে। রাজ্যের অন্তত ৬৫০টি সড়ক বন্ধ। ১২০০ বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র বিধ্বস্ত। দেড়শোর বেশি জল সরবরাহ প্রকল্প গত ২৪ ঘণ্টা স্তব্ধ। কুলু, মানালি হাইওয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আতঙ্ক কমছে না। কারণ পূর্বাভাস হল, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় প্রবল মেঘভাঙা বর্ষণ হতে পারে দেরাদুন, চম্পাবত, নৈনিতাল, পিথোরাগড় এবং উধম সিং নগরে। 

    প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার ফোনে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির সঙ্গে। উত্তরাখণ্ড সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বিস্তারিত রিপোর্টে জানিয়েছে, রাজ্যের বহু অংশ এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে স্তব্ধ। বিপর্যস্ত। বিস্তীর্ণ অংশ পর্যটকশূন্য। পুজোর বুকিং বাতিলের ঢল নেমেছে। পাশাপাশি চাপ বাড়ছে বিরোধী দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং প্রকৃতি রক্ষার সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলির। তাদের দাবি, অনেক হয়েছে। এবার চারধাম প্রকল্পে ইতি টানুক সরকার। কেন্দ্রকে স্পষ্ট জানানো হোক, হাইওয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির নামে দেবভূমি ধ্বংসের ব্রত থেকে সরে আসতে হবে মোদি সরকারকে। সবার আগে পাহাড় কেটে নির্মীয়মাণ একঝাঁক সুড়ঙ্গপথে। 

     মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত হৃষীকেশও। -পিটিআই (নীচে)
  • Link to this news (বর্তমান)