• জেলা প্রশাসনের ফান্ডের চার কোটি লোপাট, গচ্ছিত রাখা আছে সরকারি অর্থ! ‘রহস্যময়ী’র খোঁজে হন্যে পুলিশ
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: চার কোটি ৪২ লক্ষ টাকার সরকারি ফান্ড নয়ছয় কাণ্ডে রহস্যময়ী এক মহিলার খোঁজে নামল জেলা পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই মামলাটিতে উত্তর দিনাজপুর জেলাশাসক দপ্তরের ক্যাশিয়ার সুব্রত চন্দ ও জেলার ভূমি অধিগ্রহণ দপ্তরের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর দেবদীপ ভট্টাচার্যকে গ্রেপ্তার করেছে রায়গঞ্জ পুলিশ। প্রশাসনের দেওয়া তথ্য এবং ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এই কাণ্ডে আরও এক মহিলা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। পুলিশ নিশ্চিত, ওই মহিলার কাছে সরকারি ফান্ড থেকে হাতানো একাংশ টাকা গচ্ছিত রয়েছে। তাই নাগালের বাইরে যাওয়ার আগেই মহিলার খোঁজে হন্যে হয়ে তল্লাশিতে নেমেছে পুলিশ। 

    তদন্তকারীদের স্পষ্ট বক্তব্য, গোটা আর্থিক কেলেঙ্কারির মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ধৃত জেলাশাসক দপ্তরের ক্যাশিয়ার সুব্রতকেই দেখা হচ্ছে। তাঁরই অঙ্গুলীহেলনে এই বিপুল অর্থ জেলাশাসক দপ্তরের সরকারি ফান্ড থেকে সরানো হয়েছে। এবং সুব্রতর যোগ্য অনুগামী হিসেবে কাজ করে গিয়েছেন আরেক ধৃত দেবদীপ। তিনি নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অন্তত ২ কোটিরও বেশি টাকা ধাপে ধাপে তুলে নিয়েছেন। তাই এই দু’জনকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। চলছে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ। 

    পুলিশ সূত্রে দাবি, এই বিপুল অর্থ কেউই আচমকা খরচ করতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবেই নামে বেনামে গয়না, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি কিনে ফেলে রাখেন। ধৃতরা সরকারি ফান্ড থেকে সরানো টাকা কোন কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছেন, তার হদিশ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে ধৃতরা পরিবার, পরিজন,  রহস্যময়ী মহিলা কারও কাছে টাকা লুকিয়ে রেখেছেন কিনা, সেটাও খুঁটিয়ে যাচাই করা হবে।

    পুলিশের দাবি, লুকিয়ে রাখা অর্থের খোঁজ পেতে ধৃতদের আকাউন্ট থাকা কয়েকটি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিয়েছে পুলিশ। বেশকিছু আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকারি টাকা উদ্ধারে যাবতীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের সম্পত্তি ক্রোক করার সম্ভাবনাও রয়েছে। 

    এদিকে জেলা প্রশাসনের স্পষ্ট ইঙ্গিত, সরকারি ফান্ড থেকে যেভাবে অর্থ হাতানো হয়েছে, তাতে এই কাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যে বা যাঁদের নাম উঠে আসবে, কাউকেই রেয়াত করা হবে না। 

    বিষয়টি সোমবার প্রকাশ্যে এলেও জেলা প্রশাসন অত্যন্ত সন্তর্পণে গত প্রায় একমাস ধরে সরকারি ফান্ড নয়ছয় হওয়ার ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্ত চালিয়েছে। সেসময় বেশ কিছু টাকাও উদ্ধার হয়। কিন্তু তারপরও হিসেবে ৪ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার গরমিল ধরা পড়েছে। জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সরকারি ফান্ড গচ্ছিত রাখা হয়। জেলা প্রশাসন সেই টাকা নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারে। ফান্ড রক্ষার ভার যার কাঁধে ছিল, সেই সুব্রত আধিকারিকদের সই নকল করে কোটি কোটি টাকা সরিয়েছেন। এব্যাপারে পুলিশের হাতে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণও রয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)