• বাইশ পদের ভোগ দেওয়া হয় ২২ পুতুলের দুর্গাকে, দশমীর আকর্ষণ ছিল নৌকা বাইচ
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ডোমকল: বাইশ পুতুলের প্রতিমাকে অর্পণ করা হয় ২২ রকমের ভোগ। বিসর্জনেও রয়েছে বিশেষ প্রথা। দশমীতে মাঝ নদীতে দুই বোনের দেখা মিললে, তবেই হয় বিসর্জন। অতীতের এমনই নানান রীতি মেনে আজও  পূজিত হন মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরের বাইশ পুতুল দুর্গা। কেউ বলেন, ৩০০ বছর, কারও মতে আরও বেশি পুরনো এই পুজো। ঠিক কত দিনের পুরনো, তাঁর কোনও প্রামাণ্য নথি নেই। তবুও দোচালার বাইশ পুতুল সর্বজনীন দুর্গাপুজো যেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইসলামপুরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। প্রতিবছর এই পুজো দেখতে দূরদূরান্তের ভক্তদের ঢল নামে।

    ভৈরবপাড়ের সর্বজনীন বাইশ পুতুল মন্দিরেই অনুষ্ঠিত হয় এই পুজো। জনশ্রুতি রয়েছে, বৈদ্য সম্প্রদায়ের হাত ধরে রায় এলাকার জমিদারদের সহায়তায় শুরু হয়েছিল এই পুজো। শোনা যায়, সপ্তদশ শতকে নবদ্বীপের ষড় গোস্বামীরা যশোর যাওয়ার পথে কসবা গোয়াসে বৈদ্য মঠে বিশ্রাম নেন। মঠের দায়িত্বে ছিলেন রামদাস স্বামী। তখন ষড় গোস্বামী সহ ২২ জন বৈষ্ণবকে ২২টি পাত্রে ভোগ দিয়ে বরণ করা হয়। সেই থেকেই ‘বাইশ ভোগ’-এর প্রচলন।

    লোকমুখে প্রচলিত, এক সময় গোয়াস পরগনাজুড়ে ভয়াবহ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। তখন বাসিন্দারা ইসলামপুরে চলে আসেন। সেই থেকে ইসলামপুরেই এই মন্দিরেই পুজো হয়। তার মাইল খানেক দূরের চকে পূজিত হন বাইশ পুতুল দুর্গার দিদি বুড়িমা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বাইশ পুতুলের দুর্গা ও চকের বুড়িমা দুই বোন। বাইশ পুতুলের দুর্গা হলেন বুড়িমার বোন। প্রতিবছর নৌকায় চেপে বুড়িমা আসতেন বোনের সঙ্গে দেখা করতে। সেই বিশ্বাস মেনে ভৈরবে যখন জল থাকত, তখন নৌকা করে বুড়িমা এলে বোনের সঙ্গে দেখা করিয়ে তবেই ২২ পুতুলের পুজোর বিসর্জন হতো। সেই বিসর্জন দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভৈরব নদের দু’পাড়ে ভিড় জামাতেন। তবে ভৈরব নদের নাব্যতা কমায় এখন নৌ-বাইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাইচ না হলেও এখনও বিসর্জনের আগে দুই ঘটের দেখা করিয়ে তবেই বিসর্জন করানো হয়। 

    দুর্গাপুজোয় দোচালায় দুর্গা সহ ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর সহ বাইশটি প্রতিমার একসঙ্গে পুজো হয়। বাইশ পুতুলে দুর্গার সঙ্গে একচালায় থাকেন তাঁর দুই কন্যা লক্ষ্মী ও সরস্বতী। আর কার্তিক এবং গণেশ থাকে চালার বাইরে। তাঁদের পাশে থাকে দুর্গার সখী জয়া ও বিজয়া। ওই এক চালাতেই থাকেন নন্দী-ভৃঙ্গী। থাকেন বাকি দেবদেবীরা। এমনই বৈচিত্র্যময় রীতি আর ঐতিহ্যের টানে প্রতিবছর ভিড় জমে ইসলামপুরে। 

    বাইশ পুতুল পুজো কমিটির সম্পাদক বিকাশ কর্মকার বলেন, এই ঐতিহ্যই আমাদের পুজোকে আলাদা করেছে। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ আসেন, এবছরও তার ব্যতিক্রম হবে 

    না। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)