সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগরে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার আরাধনার আগেই শহরের বাজারগুলোতে শুরু হয়েছে রঙিন ঘুড়ি কেনার হিড়িক। শিশু থেকে যুবক সবাই উৎসাহের সঙ্গে আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। এই সময়ে বাজারগুলোতে ঘুড়ির দোকানগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেখানে রঙিন ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের ঘুড়ি বিক্রি হচ্ছে।
কৃষ্ণনগর শহরের বিভিন্ন মাঠ, পার্ক ও বাড়ির ছাদ থেকে পুজোর দিন সকলে ঘুড়ি ওড়াবে। রঙিন ঘুড়ি উড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আকাশে রঙের ছড়াছড়ি হবে, যা পুজোর আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশ্বকর্মা পুজো শুধুমাত্র দেবশিল্পী আরাধনার অনুষ্ঠান নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি, সামাজিক মিলনের উৎসব। ছেলেমেয়েদের ঘুড়ি ওড়ানো সেই উৎসবে আনন্দের প্রতীক।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ঘুড়ি ওড়ানো মানেই আমাদের জীবনের ছোটবেলায় দিনগুলিতে ফিরে যাওয়া। বিশ্বকর্মা পুজোর সময় ঘুড়ি ওড়ানো একরকম ঐতিহ্য, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে চলে আসছে। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই ঘুড়ির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে মোবাইলের নেশায় ডুবে থাকে। কিন্তু ইদানীং এই ঘুড়ি ওড়ানোর চল আবার কিছুটা বাড়ায় বিশ্বকর্মা পুজোর আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
রায়পাড়া থেকে ঘুড়ি কিনতে আসা ১৭ বছরের এক যুবক রাহুল বিশ্বাস বলেন, আমি আজ চার বছর ধরে ঘুড়ি ওড়াচ্ছি। দাদার কাছ থেকে শিখেছি। শুধু বিশ্বকর্মা পুজো বলে নয় মাঝে মাঝেই ঘুড়ি ওড়াই। বিশ্বকর্মা পুজোয় প্রচুর ঘুড়ি ওড়ে, তাই ভালো মাঞ্জা দেওয়া সুতো এবং ভালো ঘুড়ি নিতে এসেছি, যাতে বাকিদের ঘুড়ি কাটতে পারি। বন্ধুরা মিলে একসাথে ঘুড়ি ওড়ালে আনন্দ বেশী হয়। তবে আমি একাও ঘুড়ি ওড়াতে ভালবাসি।
শুকুল পাড়ার এক ঘুড়ি ব্যবসায়ী প্রভাকর দত্ত বলেন, আমি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ঘুড়ি ব্যবসায় সঙ্গে জড়িত। ঘুড়ির চাহিদা আগে শীতকালে বেশি ছিল, বর্তমানে বিশ্বকর্মা পুজো থেকে শুরু করে শীতকাল পর্যন্ত ব্যবসা চলে। লকডাউনের আগে ঘুড়ি ব্যবসায় খুব খারাপ অবস্থায় ছিল, কিন্তু লকডাউনের পর থেকে আবার বেড়েছে। ওই সময় মানুষ জন বাড়ির ছাদ থেকে প্রচুর ঘুড়ি উড়িয়ে আনন্দ পেয়েছিল। এ বছরও ব্যবসা আগের তুলনায় একটু ভালো। ঘুড়ির কাঁচামাল বিশেষ করে কাঠির বাঁশ সব আসে আসাম মেঘালয়ের দিক থেকে। বাজার দর গতবছরের থেকে একটু বেড়েছে।
আনন্দময়ীতলার আরও এক ঘুড়ি বিক্রেতা বলেন, প্রতি বছরই বিশ্বকর্মা পুজোর আগে আমাদের দোকানে ক্রেতার ভিড় থাকে। বিশেষ করে বড়, রঙিন এবং নতুন ডিজাইনের ঘুড়ির জন্য চাহিদা বেশি থাকে। ঘুড়ির দাম ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আছে। বিশ্বকর্মা পুজো মানেই আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব। ঘুড়ির টানে ছোট-বড় সকলে মেতে ওঠে। ব্যস্ত জীবনে রঙিন ঘুড়িতে ভরে ওঠা আকাশ সবাইকে একসাথে আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগ করে দেয়। • ঘুড়ি হাতে কচিকাঁচারা। -নিজস্ব চিত্র