• আসানসোলবাসীর ‘জলদাতা’ বিশেষভাবে সক্ষম জিতেন
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: গোটা শহর যখন ঘুমোয় তখন বাড়িতে, দোকানে জল পৌঁছে দিয়ে সাধারণ মানুষকে নিশ্চিন্তে থাকার গ্যারান্টি দেন জিতেন। জিতেন কিন্তু আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতো নন। একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী তিনি। দুটি পা-ই সম্পূর্ণ অচল। সেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই ট্রাই সাইকেলে জল বয়ে পৌঁছে দেন তিনি। 

    জিতেনের হুইচ চেয়ার বা ট্রাই সাইকেলটি বিশেষ ভাবে বানানো। যাতে অনেক জলের জ্যারিকেন রাখা যায়। হ্যান্ডেলের কাছেই বাঁধা রয়েছে জলের পা‌‌ইপ। তাঁর সেই বিশেষ যান নিয়ে আসানসোল সংশোধনাগারের কাছে রাস্তার ট্যাপ কলে পৌঁছে যান জিতেন। ট্যাপের মুখে পাইপ গুঁজে ভরে ফেলেন একের পর এক জ্যারিকেন। তারপর নিজের ট্রা‌ই সাইকেল নিয়ে পৌঁছে যান একের পর এক দোকানে। চৌবাচ্চাগুলি এমন ভাবে রাখা হয়েছে যাতে তা জিতেনের নাগালে থাকে। সবক’টি জ্যারিকেন শেষ হয়ে গেলে ফের কলতলায় হাজির জিতেন। বাজারের মধ্যে এই ট্যাপ হওয়ায় তেমন ভাবে কেউ জল ভরে না। তাই কলতলায় নেই কোন প্রতিযোগিতা। আবার সবক’টি জ্যারিকেন ভরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অন্য দোকানের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। এই ভাবে বেশ কয়েক ঘণ্টা হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে পরিবার ও নিজের পেট চালানোর রসদ প্রতিদিন জোগাড় করছেন তিনি। 

    জানা যায়, প্রথম ১৫ বছর স্বাভাবিকই ছিলেন। তারপরই তাঁর পোলিও ধরা পড়ে। বয়স যত বেড়েছে সম্পূর্ণ প্রতিবন্ধী হয়ে গিয়েছেন তিনি। তিনি অবিবাহিত হলেও দাদা, বউদি, ভাইপোরা রয়েছে। গরিব দাদার সংসারে বোঝা হতে চাননি তিনি। তাই চেলিডাঙা রেল বস্তির জিতেন কাঁধে তুলে নিয়েছেন আসানসোলবাসীকে ‘সজল’ রাখার দায়িত্ব। আসানসোল কোর্ট থেকে বিএনআর পর্যন্ত জল সরবরাহ করেন তিনি। এক জ্যারিকেন জল দিলে কেউ দেয় তিন টাকা কেউ দেয় পাঁচ টাকা। তাই নিয়েই দাদার সংসারে অর্থ জোগান তিনি। ভাইপো রাজেশ রায়কে পড়াশোনা শেখাচ্ছেন। 

    যে জিতেনের নিজেরই সংসারে বোঝা হওয়ার অবস্থা ছিল, তিনিই এখন বহু মানুষের জলের বোঝা বাইছেন। একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী মানুষটি একদিন জল দিতে না এলে মাথায় বজ্রপাত হয় ব্যবসায়ীদের। কীভাবে ব্যবসার জন্য জল ব্যবহার করবেন। কী করে ক্রেতাদের হাতে জল তুলে দিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন মানুষ। লস্যির দোকানের ব্যবসায়ীর কারবার লাটে ওঠে জিতেন একদিনও কর্তব্যে অবহেলা করলে। যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি, জিতেন ফাঁকি দিতে জানে না। শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হলেও মানসিক ভাবে সব সময়ে চাঙ্গা। বা‌ই঩কের মেকানিক সুব্রত মণ্ডল বলেন, আমার গ্যারেজে সব জল জিতেন সরবরাহ করে। উনি না থাকলে ভেবে পাই না কীভাবে কাজ করব। জিতেন জলের বিষয়ে আমাদেরই প্রতিবন্ধী করে দিয়েছে। 

    আসানসোল পুরসভার ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক বলেন, খুবই ভালো ছেলে। আমাদের বাড়ির কাছের বস্তিতে থাকেন। কারও দয়ার উনি বাঁচতে চান না। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)