শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: প্রেমিকের সঙ্গে চম্পট দিয়েছিল তাঁর নাবালিকা মেয়ে। উদ্ধার করতে থানা-পুলিস করতে হয়েছিল মা’কে। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস তিনমাস পর ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে। গ্রেপ্তার করা হয় প্রেমিক সহ তার দুই আত্মীয়কে। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। উদ্ধার করার পরই ঘটনাটি মোড় নেয় অন্যদিকে। মামলার তদন্তকারী অফিসারের কুনজরে পড়ে যান নাবালিকার মা! তাঁর মেয়েকে ফিরিয়ে আনার বিনিময়ে সরাসরি কুপ্রস্তাব দিয়ে বসেন তিনি। রাজি না হলে ওসির নাম করে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার দাবি করেন। বেগতিক বুঝে মঙ্গলবার ওই বধূ স্বামীকে নিয়ে সটান চলে যান পুলিশ সুপারের কাছে। লিখিত অভিযোগ জানিয়ে ফাঁস করে দেন ওই অফিসারের কুকীর্তি। নন্দকুমার থানার এই ঘটনাকে ঘিরে এখন তোলপাড় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের অন্দর। অভিযুক্ত অফিসারের নাম রঞ্জিত মান্না। তিনি সাব ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত।
ওই বধূর বাড়ি নন্দকুমার থানার চকশিমুলিয়া গ্রামে। এদিন স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তমলুকের নিমতৌড়িতে পুলিশ সুপারের অফিসে যান। সেখানে ওই সাব ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান। পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাটি সত্যি হলে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
জানা গিয়েছে, ওই বধূর ১৫ বছরের মেয়ে গত ২৪ মে লছিপুর গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে চম্পট দেয়। সে ক্লাস নাইনের ছাত্রী। ঘটনার দিনই নাবালিকার মা থানায় এফআইআর করেন। মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে রাজা খাটুয়া ও তার বাবা নারায়ণ খাটুয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কেসের তদন্তের ভার পান এসআই রঞ্জিত মান্না। শুরুতে তদন্তকারী অফিসার তাঁদের মেয়েকে উদ্ধার নিয়ে নিষ্ক্রিয় ছিল বলে পরিবারের অভিযোগ। বাড়ির লোকজন এনিয়ে সার্কেল ইনস্পেক্টর, মহকুমা পুলিস অফিসার এবং পুলিশ সুপারের কাছে যান। ঘটনার তিন মাস বাদে নাবালিকাকে উদ্ধার করে পুলিশ। সেইসঙ্গে তার প্রেমিক সহ দু’জনকে গ্রেফতার করে।
নাবালিকাকে উদ্ধারের পরই তদন্তকারী অফিসার ওই বধূর ফোন নম্বরে বার বার ফোন করতে থাকেন বলে অভিযোগ। তাঁকে কুপ্রস্তাব দিতে থাকেন। অভিযোগ, তিনি কখনও নন্দকুমারে নিজের বাসায় আবার কখনও তমলুক শহরে যেতে বলেন। ওই বধূ রঞ্জিতবাবুর প্রস্তাবে রাজি হননি। তখনই তিনি থানার ওসির নাম করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ। পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কথোপকথনের কিছু অডিও ওই বধূ নিজের জিম্মায় রেখেছেন। এদিকে, পুলিশ অফিসারের কাছ থেকে বার বার ফোন আসায় ওই বধূ এদিন স্বামীকে নিয়ে সোজা পুলিশ সুপারের অফিসে পৌঁছে যান।
ওই বধূ বলেন, দীর্ঘ টালবাহানার পর আমার মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। সেইসঙ্গে অভিযুক্ত যুবক ও তার ভগ্নিপতিকেও গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ওই পুলিশ অফিসারের কুপ্রস্তাবে আমি রাজি না হলে অভিযুক্তকে জামিন পেতে সাহায্য করা হবে ব্ল্যাকমেল করছিলেন। এই প্রস্তাব আমার পক্ষে মানা সম্ভব নয় জানানোর পর ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি জানিয়েছিলাম, স্বামীর রোজগার নেই। অত টাকা দিতে পারব না। কিন্তু, প্রতিনিয়ত ফোনে বিরক্ত করতেন। বাধ্য হয়ে আমি পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হই।
অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার রঞ্জিতবাবু বলেন, আমি ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করেছি। অভিযুক্ত যুবককেও গ্রেফতার করেছি। অভিযোগকারীর থেকে টাকা চাওয়ার প্রশ্ন নেই। কুপ্রস্তাবের অভিযোগও ঠিক নয়।