নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চোরবাজার আছে। চোরবাগানও আছে কলকাতায়। কিন্তু চোরাগোপ্তা এসে হামলা চালায় এমন চোর ঘুড়ি যে আছে, সে কথা জানা ছিল কি? জানা যায় বইকি। কলকাতায় ঘুড়ির বাজার ঘুরলেই শোনা যায়। সেগুলির নাম, ‘চোর ঘুড়ি’। এ ঘুড়ি আকাশে উড়লে চোখে পড়ে না। এ ঘুড়ি কাটা যায় না। এ ঘুড়ি মাটিতে দৃশ্যমান। কিন্তু আকাশে অদৃশ্য।
ম্যাজিক নয়, দোকানদাররা স্রেফ ঘুড়ির রং দিয়েছে সাদা করে। ফলে আকাশে তা মিশে যায়। আর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে কেটে নেয় প্রতিপক্ষের ঘুড়ি। এই ঘুড়িই এবার আকাশ জয় করবে বলে বিশ্বাস ঘুড়ি উড়িয়েদের। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার বা লেবুতলা, এন্টালি থেকে ক্রিক রো, শ্যামবাজার থেকে সল্টলেক, বারাসত থেকে গড়িয়া, চোর ঘুড়িতেই চোখ আটকাচ্ছে এবছর।
লেবুতলায় পাশের পাড়ার বাবলু আঙুল গুনে হিসেব কষছে, আর কত টাকা ওর হাতে রইল। সেই টাকায় আর ক’টা ঘুড়ি কেনা যাবে? এদিকে ক্লাবের দাদারা দোকানিকে বলছেন, ‘সাদা ঘুড়িটাই বেশি দাও।’ এসব নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য দোকানিরা বিশেষ ব্যাগ তৈরি করেছেন। তার আবার অতিরিক্ত দাম। বিশ্বকর্মা পুজোর আগে মঙ্গলবার ঘুড়ির বাজার চাঙ্গা। এক ডজনের দাম ১০০ টাকা থেকে শুরু, ৩০০ পর্যন্ত আছে। বড় ঘুড়ির একটির দাম ৭০ টাকার মতো পড়ছে। এক ক্রেতা বললেন, ‘দাম একটু বেশিই নিল। কিন্তু বছরে একবারই তো ওড়ানো হবে। ঠিকই আছে।’ এদিকে বাবলু তার বাবার হাত ধরে ঘুরছে এ দোকান থেকে সে দোকান। তাকে ওর ঠাকুমা ঘুড়ি কেনার টাকা দিয়েছে। সে টাকা একটু কম পড়েছে। কারণ, কেউ দাম কমাচ্ছে না। ফলে এবার পরিত্রাতার ভূমিকায় বাবা। কিছু দোকান এর মধ্যেই শোনাচ্ছে, ‘মাঞ্জা ছাড়া কিন্তু ঘুড়ি বিক্রি নেই।’ পেটকাটি, মোমবাতি, চাঁদিয়াল, বগ্গার সঙ্গে আছে কিছুমিছু লেখা ঘুড়ি। কোথাও দোকানের নাম, কোনওটাতে ‘শুভ বিশ্বকর্মা পুজো’ লেখা। রয়েছে জনপ্রিয় অ্যানিমেশন চরিত্রের ছবি, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের লোগো ইত্যাদি। কলকাতার বিখ্যাত জায়গার ছবিও রয়েছে কিছু ঘুড়িতে আঁকা।
বাচ্চারা কি আজকাল শুধুই স্মার্টফোনে ব্যস্ত? তাই ঘুড়ি বিক্রি কমেছে? বিক্রেতারা বলেন, ‘আগের চেয়ে কমেছে ঠিকই। কিন্তু এবছর বিক্রি মন্দ না।’ ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে ঘুড়ি কিনতে এসেছিলেন সত্যেন মুখোপাধ্যায়। বললেন, ‘এখনকার অনেক বাবা ঘুড়ি ওড়াতে জানেন না। তাই বাচ্চাদের নিয়ে ঘুড়ির দোকানেও আসেন না। এসব উৎসাহ তো বাবা-মাকেই দিতে হবে।’ শেষ পর্যন্ত বাবলু বাবার কাছ থেকে টাকা পেল। ঘুড়ি মাঞ্জা কেনার পর কিছু টাকা বেঁচেও গেল বাবলুর। ওটা দিয়ে দুর্গাপুজোর সময় ক্যাপ বন্দুক কিনবে বলে মনস্থির করেছে সে।