• দু’বছরেই বেআব্রু মোদির সাধের বিশ্বকর্মা প্রকল্প, নামেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়তা, প্রায় ৩ কোটি আবেদনে ব্যাংক ঋণ মাত্র ৪ লক্ষকে
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: আজ থেকে ঠিক দু’বছর আগের কথা। ২০২৩ সালের বিশ্বকর্মা পুজোর দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন ‘পিএম বিশ্বকর্মা’ প্রকল্প। উদ্দেশ্য ছিল কারিগর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বনির্ভরতা। মোদি সরকারের অন্য যে কোনও প্রকল্পের মতো ‘পিএম বিশ্বকর্মা’ নিয়েও প্রচারের ঢক্কানিনাদে কমতি ছিল না। কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে এই প্রকল্প আনা হয়েছিল, তা পূরণ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট। 

    চলতি বছর পর্যন্ত এই প্রকল্পে প্রায় তিন কোটি আবেদন জমা পড়েছে। তবে এমএসএমই মন্ত্রকের আওতাধীন এই স্কিমে এখনও পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন পেয়েছেন ২৯ লক্ষ ৯৮ হাজার মানুষ। অর্থাৎ আবেদন ও প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক। কেন্দ্র ঘোষণা করেছিল, প্রকল্পের একাধিক সুবিধার মধ্যে অন্যতম হল সহজ শর্তে মিলবে ব্যাঙ্ক ঋণ। সেই ঋণের টাকায় নতুন ব্যবসা বা কাজ শুরু করে জীবিকা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল। সেই জায়গায় দেখা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় ঋণ পেয়েছেন মাত্র ৩ লক্ষ ৯১ হাজার আবেদনকারী। যদিও ঋণ পেতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে প্রায় ১২ লক্ষ ২০ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল। অর্থাৎ প্রায় তিন কোটি মানুষ যে প্রকল্পের সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন, ঋণ নিয়ে সফলভাবে ব্যবসা করার হার সেখানে দেড় শতাংশেরও কম! 

    এই প্রকল্পে মোট ১৮টি ক্ষেত্রের কারিগর ও ক্ষুদ্র উদ্যোগপতিদের সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়। সেই তালিকায় আছে ছুতোর, কামার, স্বর্ণকার, কর্মকার, নৌকা প্রস্তুতকারী, কুমোর, রাজমিস্ত্রি, মালাকার, পোশাক শিল্পী, মাছ ধরার জাল প্রস্তুতকারক ইত্যাদি কাজ বা পেশা। সরকার আরও ঘোষণা করে, আবেদনকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য  ৪০ ঘণ্টার (৫ থেকে ৭ দিন) প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাঁরা আরও প্রশিক্ষণ চান, তাঁদের জন্য ১২০ ঘণ্টার (১৫ দিন) বাড়তি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। প্রশিক্ষণ চলাকালীন দৈনিক ৫০০ টাকা করে মিলবে ভাতা। যন্ত্রপাতি কেনার জন্য পাওয়া যাবে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা। এরই সঙ্গে দু’ধাপে সর্বোচ্চ তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত কম সুদে ঋণ পাওয়া যাবে ব্যংক থেকে। প্রকল্পের অধীনে যাঁরা ঋণ নেবেন, তাঁদের ৫ শতাংশ হারে সুদ মেটাতে হবে। ৮ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসেবে দেবে এমএসএমই মন্ত্রক। ঋণের জন্য কোনও কিছু বন্ধক রাখতে হবে না। পাশাপাশি, পণ্যের বাজার পাইয়ে দিতে বিভিন্ন মেলা ও ই-কমার্স সংস্থার সঙ্গে যোগাসূত্র গড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার।

    তথ্য বলছে, এই স্কিমে এখনও পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। প্রায় ৭ লক্ষ ৮৭ হাজার আবেদন পত্রপাঠ বাতিল করে দিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। ঋণ প্রদানে যে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, তা মানছে এমএসএমই মন্ত্রকও। তাদের বক্তব্য, এ বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা চলছে অর্থমন্ত্রকের আওতায় থাকা ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের সঙ্গে। এই অবস্থায় ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, বিস্তর ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করা মোদির অন্যান্য কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্পের মতোই করুণ অবস্থা ‘পিএম বিশ্বকর্মা’র। তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকেই বিষয়টি পরিষ্কার। 
  • Link to this news (বর্তমান)