• মৃত্যুর পরেও দান, প্রাণ বাঁচালেন রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য অধিকর্তা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • মৃত্যুর পরেও অন্যের প্রাণ বাঁচিয়ে এক বিরল নজির তৈরি করলেন রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সঞ্চিতা বকসী। ৭৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেও তাঁর অঙ্গদানে নতুন জীবন পেলেন দু’জন রোগী। শুধু তাই নয়, তাঁর কর্নিয়াও সংরক্ষিত হয়েছে পরিবারের সিদ্ধান্তে। রাজ্যে এ বছরের ১৪তম অঙ্গদানের ঘটনা এটি, যা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

    জানা গিয়েছে, নিউটাউনের বাসিন্দা সঞ্চিতা বকসী ৯ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে দ্রুত বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই শুরু হয় চিকিৎসা। তবে অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। ১১ সেপ্টেম্বর তাঁকে ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পরিবারের সঙ্গে আলোচনার পর সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তাঁর দুই মেয়ে— মায়ের অঙ্গদান করবেন। এক কন্যা বিদেশে ছিলেন, তিনি দেশে ফিরেই এই সিদ্ধান্তে সায় দেন।

    চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ও ‘রোট্টো’ অর্থাৎ রিজিওনাল অর্গান এন্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশনের সহযোগিতায় প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। সঞ্চিতা দেবীর লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে ৪৮ বছরের এক পুরুষের শরীরে। আর একটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়েছে বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে ৪৯ বছরের এক মহিলার শরীরে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে ব্যবহার করা যায়, সেই হিসেবে তাঁর কর্নিয়া সংরক্ষিত করা হয়েছে।

    চিকিৎসক মহলের মতে, এই অঙ্গদান ইতিহাস তৈরি করেছে দুই কারণে। প্রথমত, রাজ্যের মধ্যে এত প্রবীণ বয়সে অঙ্গদান বিরল। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্য দপ্তরের শীর্ষপদে কাজ করা কারও পরিবার প্রথমবার এভাবে অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া।

    সঞ্চিতা দেবীর মেয়ে অনিন্দিতা বকসী জানিয়েছেন, ‘মা সব সময় অঙ্গদানের পক্ষে ছিলেন। বলতেন, এভাবে মানুষের উপকার হোক। আমরা শুধু তাঁর ইচ্ছাপূরণ করেছি। ভাবলাম, মায়ের অঙ্গে যদি অন্য কারও প্রাণ বাঁচে, সেটাই আমাদের কাছে সান্ত্বনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু তাঁর অঙ্গদানের মাধ্যমে যদি কারও জীবন ফিরে আসে, সেটাই আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি।’

    চিকিৎসক মহল মনে করছে, প্রাক্তন স্বাস্থ্য অধিকর্তার এই অঙ্গদান বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে। পরিবার যেভাবে শোকের মধ্যেও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সমাজে এক বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)