• তিন বছর পূর্তিতে ১৬টি ‘ভারতীয় চিতা’ কুনোয়!
    এই সময় | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • শিলাদিত্য সাহা

    অবাস্তব, অবৈজ্ঞানিক। গিনিপিগের কারখানা! আফ্রিকা থেকে মধ্যপ্রদেশের কুনোর জঙ্গলে উড়িয়ে আনার কয়েক মাস পরে যখন একের পর এক চিতার মৃত্যু সংবাদ আসছে, নানা মহল থেকে এমনই মন্তব্য উড়ে এসেছিল‍।

    প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বপ্নের প্রকল্প’, তাঁরই জন্মদিন ১৭ সেপ্টেম্বরে চিতাদের এ দেশের জঙ্গলে ছাড়া হয়েছে — সেই প্রকল্পের সাময়িক ব্যর্থতায় বিরোধী রাজনীতিকরা যেমন সরব হয়েছেন, তেমনই বিজ্ঞানীদের একাংশও প্রশ্ন তুলেছেন, কেন ভালো মতো গবেষণা না–করেই বিদেশি অতিথিদের এ দেশে আনা হলো।

    ২০২২–এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩–এর ফেব্রুয়ারি — নামিবিয়া ও সাউথ আফ্রিকা মিলিয়ে ২০টি চিতা এসেছিল কুনোয়। আর ২০২৩–এর মার্চ থেকে অগস্ট — এই কয়েক মাসে তাদের মধ্যে পাঁচটি চিতা মারা যায়। মার্চে জন্মানো তিনটি চিতাশাবকও কুনোর গরম সহ্য করতে না পেরে মারা যায় জলশূন্যতায়। কুনোর চিতার সংখ্যা এক ধাক্কায় নেমে আসে ১৩–তে! আর এখন? প্রকল্পের তিন বছর পূর্তির মুখে ঠিক কেমন রয়েছে চিতারা?

    ব্যর্থতার আঁধার থেকে অনেকটা আলোর পথে ফিরে এই মুহূর্তে ভারতের মুক্ত জঙ্গলে চিতার সংখ্যা ২৭! এবং তার মধ্যে এদেশে জন্মানো চিতাই ১৬টা। সংখ্যাটা বর্ষবরণের দিনেও ১৭ থাকতে পারত, যদি না গত সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর লেপার্ডের হামলায় জখম হয়ে একটি চিতাশাবক মারা না–যেত।

    ভারতে চিতার প্রথম আবাস কুনোয় এখন ২৫টি চিতা, দ্বিতীয় আবাস গান্ধীসাগরে দু’টি। তবে এই বিন্যাসও আজই পাল্টে যাচ্ছে। এপ্রিলের শেষে কুনো থেকে গান্ধীসাগরে পাঠানো হয়েছিল সাউথ আফ্রিকান পুরুষ চিতা প্রভাস আর পাবককে।

    আজ, বুধবার কুনো থেকে গান্ধীসাগরে পাঠানো হবে সাউথ আফ্রিকান মাদি চিতা ধীরাকে। মনে করা হচ্ছে, গান্ধীসাগরের জঙ্গলে প্রভাস–পাবক এই কয়েক মাসের গ্রীষ্ম–বর্ষায় ভালোই মানিয়ে নিয়েছে। তাই এ বার ধীরাকে পাঠানো হচ্ছে, যাতে গান্ধীসাগরও আফ্রিকান চিতাদের উত্তর প্রজন্ম পেতে পারে।

    কুনোর চিফ কনজ়ারভেটর অফ ফরেস্ট উত্তম কুমার শর্মার বক্তব্য, পুরোটাই বিজ্ঞানভিত্তিক কাজের ফসল। তাঁর কথায়, ‘আফ্রিকান চিতারা এদেশের জল–হাওয়ায় মানাতে পারবে না, অনেকেই বলেছিলেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, তারা মানিয়েছে। তাদের পরবর্তী প্রজন্মও দুর্দান্ত ভাবে জঙ্গলে ছড়াচ্ছে।

    আমাদের বনকর্মী, গবেষক, চিকিৎসকদের দল সব প্রোটোকল মেনে ওদের দেখভাল করছে। আজ যে ১৬–১৭টা চিতাশাবক কুনোয় দেখছেন, তারাই প্রমাণ যে আমরা ঠিক পথে চলছি।’

    উত্তমের ব্যাখ্যা, এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশের জঙ্গলে চিতা রিইন্ট্রোডাকশনের মতো প্রকল্পের মূল্যায়ন এত কম সময়ে সম্ভব নয়। কারণ প্রথম পাঁচ বছর পরে হয় শর্ট টার্ম ইভ্যালুয়েশন, পাঁচ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত সময় ধরা থাকে মিড টার্ম, আর ২৫ বছরের পরে করা হয় লং টার্ম ইভ্যালুয়েশন। আপাতত প্রথম তিন বছরে কুনো আর গান্ধীসাগরে চিতা প্রকল্প যে পথে এগোচ্ছে, তা রীতিমতো আশাপ্রদ— মনে করছেন কুনোর বনাধিকারিকরা।

    তবে চিন্তার কারণও রয়েছে। প্রকল্পের শুরুতে বিজ্ঞানীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছিলেন, কুনোর জঙ্গলে আকার–আয়তন ও ক্ষমতায় এগিয়ে থাকা লেপার্ডের সঙ্গে কী করে পেরে উঠবে চিতা? কুনোর বনাধিকারিকরা গত তিন বছরের গবেষণায় দেখেছিলেন, কুনোর মুক্ত জঙ্গলে চিতা আর লেপার্ড নিজেদের আলাদা হোম রেঞ্জ তৈরি করছে।

    কেউ কারও এলাকায় আসছে না, শিকার নিয়েও মারামারি হচ্ছে না। কিন্তু গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাদি চিতা জ্বালার চারটি শাবকের একটি মারা গিয়েছে লেপার্ডের সঙ্গে মারামারিতে তৈরি হওয়া ক্ষত থেকেই। অন্তত প্রাথমিক তদন্তে েতমনটাই মনে করছেন কুনো কর্তৃপক্ষ। ২০ মাসের মাদি শাবকটি গত একমাস ধরে মা জ্বালার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছিল, গত ক’দিনে সে বাকি তিন ভাই–বোনের থেকেও দূরে চলে যায়।তবে কি লেপার্ড–চিতা সংঘাতের আশঙ্কাটাই সত্যি হতে চলেছে? তিন বছর পূর্তিতে সেই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজছে কুনো।

  • Link to this news (এই সময়)