একবিংশ শতাব্দীতে বালিকাবধূ! বৃদ্ধি পাচ্ছে নাবালিকা মায়ের সংখ্যাও, রাজ্যের সঙ্কটে তৎপর শিশু সুরক্ষা কমিশন...
আজকাল | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গোপাল সাহা
সেই বহু যুগ আগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় বাল্যবিবাহ নিয়ে বহু আন্দোলন করে বাল্যবিবাহ প্রথাকে বন্ধ করেছিলেন। সেটি ছিল সমাজের কুপ্রথার বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই এবং অবশেষে জয়। তবে সেই কুপ্রথা ছিল তৎকালীন সময়ে সমাজে নারী শিক্ষার অভাবে অন্ধকারের অতলে তলিয়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ। বলাবাহুল্য, তৎকালীন সময়ে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ দেশের পাশাপাশি সমাজের নারীরাও ছিল শৃঙ্খলে আবদ্ধ। যার শৃঙ্খলমোচন করেছিলেন অর্থাৎ বাল্যবিবাহ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন সমাজকে বিদ্যাসাগর মহাশয়। কিন্তু বর্তমানে একাবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে নারী সমাজের এমন মতিভ্রম, অষ্টাদশী হওয়ার পূর্বেই ঘর ছাড়ছেন বহু নাবালিকারা।
কিন্তু কেন?
শোনা যাচ্ছে, প্রেমের টানে অষ্টাদশী হওয়ার আগেই ঘর ছাড়ছে নাবালিকারা। কারও সঙ্গে পালিয়ে সংসার পাতছে, আবার কারও বিয়ে দিচ্ছে বাড়ির লোকই। আইন, প্রশাসন, প্রচার— সব কিছুর পরেও থামছে না বাল্যবিবাহ।
কি বলছে শিশু সুরক্ষা কমিশন?
রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের পরিসংখ্যান ভয় ধরাচ্ছে। কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এখন প্রায় ৬০ শতাংশ বাল্যবিবাহের সূত্রপাত প্রেমের সম্পর্কে। বাকি ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে পরিবারই মেয়েকে বিয়ে দিতে তৎপর হচ্ছে। তিনি স্পষ্ট বললেন, “এটা খুবই চিন্তার বিষয়। প্রেমিকের হাত ধরে বাড়ি ছাড়ছে মেয়েরা। ফলে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যাও বাড়ছে। সমাজের জন্য এটা মারাত্মক সঙ্কেত।”
সমাজ ও সচেতনতা
শুধু প্রচার নয়, স্কুলভিত্তিক সচেতনতার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে এখন। অনন্যা চক্রবর্তী বোলপুরে এসে বুধবার শান্তিনিকেতন থানার চাইল্ড ফ্রেন্ডলি কর্নার ঘুরে দেখেন। পুলিশ ও মহকুমা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকেও বসেন তিনি। তাঁর পরামর্শ ছিল সোজাসাপ্টা, যেখানেই বাল্যবিবাহের খবর পাওয়া যাবে, সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ দায়ের করতে হবে।
জেলায় বাড়ছে বালিকা বধূ ও অকাল মাতৃত্ব
বীরভূম জেলা প্রশাসনও যথেষ্ট চিন্তিত। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই নাবালিকা কন্যার বিয়ে হলেও সময় মতো খবর পৌঁছয় না প্রশাসনের কানে। তত দিনে সব শেষ হয়ে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, বাল্যবিবাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নাবালিকা মায়েদের সংখ্যা।
প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও সামাজিক ভূমিকা
প্রশাসনের তরফে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বড় সাফল্য আসেনি। তবে হাল ছাড়ছে না কেউ। জেলায় নিরন্তর সচেতনতা কর্মসূচি চলছে। কমিশনের পক্ষ থেকে থানাগুলিকে বারবার বলা হচ্ছে, অভিযোগ এলে ঝটপট পদক্ষেপ করতে হবে।
প্রশাসনের দাবি, শুধু পুলিশ বা সরকারি প্রচার নয়, সমাজকেও সামনে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার, স্কুল, পাড়া সর্বত্র বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ উঠলেই তবেই রাশ টানা সম্ভব।
বলাবাহুল্য, প্রেম জীবনের সুন্দর অধ্যায় বটে, কিন্তু বয়সের আগেই বিয়ে? তার ফল ভয়ঙ্কর হতে পারে। তাই প্রশ্ন একটাই— প্রেম নাকি ভবিষ্যৎ?