এসএসকেএম হাসপাতালে মঙ্গলবার নতুন উডবার্ন ওয়ার্ড ‘অনন্য’র উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ১০ তলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনের নামটি রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো আরও পাকাপোক্ত করতে একগুচ্ছ স্বাস্থ্য প্রকল্পেরও সূচনা করেছেন তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, স্বাস্থ্যবিমায় যে জিএসটি ছাড় দেওয়া হল, তা তিনিই প্রথম দাবি করেছিলেন।
নতুন উডবার্ন ওয়ার্ডে থাকছে ১৩১টি কেবিন। সিঙ্গল কেবিনের ভাড়া রাখা হয়েছে দৈনিক ৫ হাজার টাকা, সিঙ্গল স্যুট ৮ হাজার টাকা, এইচডিইউ পরিকাঠামো যুক্ত শয্যার ভাড়া ১২ হাজার টাকা, আইটিইউ শয্যার জন্য ১৫ হাজার টাকা ভাড়া ধার্য করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতি ক্ষেত্রেই ২ হাজার টাকা বেশি করে ভাড়া ধার্য করেছিলেন। তবে তিনি সেই টাকা কমিয়ে দিয়েছেন।
এদিনের অনুষ্ঠান থেকে কলকাতা পুলিশ হাসপাতালের নতুন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ব্লকের উদ্বোধন করা হয়। এর নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫.৭১ কোটি টাকা। পাশাপাশি ২৪.৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত লি রোডের ৭ তলা ছাত্রাবাসের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এসএসকেএম হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক ১২৮ স্লাইস সিটি স্ক্যান মেশিন। এর জন্য খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি সম্পূর্ণ রোবোটিক সার্জিক্যাল সিস্টেমের জন্য ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। এই পরিষেবা রাজ্যে চিকিৎসাক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মত চিকিৎসক মহলের।
নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের অপারেশন থিয়েটার সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য ভবনের নতুন অ্যানেক্স–১ ভবনের জন্য ব্যয় হয়েছে ১৬ কোটি টাকা। ৩২.৯২ কোটি টাকা খরচে নির্মিত হয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল অধিদপ্তরের আধুনিক ভবন। মঙ্গলবারের অনুষ্ঠান থেকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তৈরি হওয়া হাড়ের ব্যাঙ্ক ও খিলাফত কমিটির উদ্যোগে নির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেছেন মমতা। রাজ্যে দুটি অত্যাধুনিক ক্যানসার হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি থাকবে এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে, অপরটি তৈরি হবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
এর জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হবে। এদিন মোট ২১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি ৩টি প্রকল্পের শিলান্যাসও করেছেন। মমতা জানিয়েছেন, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নই সরকারের অগ্রাধিকার। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা আধুনিক, দ্রুত ও সুলভ করার জন্য এই প্রকল্পগুলি উদ্বোধন করা হয়েছে। ২০১১ সালে ইনস্টিটিউশনাল জন্মের হার ছিল ৬০ শতাংশ। এখন সেটা ৯৯ শতাংশ। ফলে এখন সকলেই বার্থ সার্টিফিকেট পাচ্ছে।
এসএসকেএমের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মমতা। ব্রিকস নেটওয়ার্কে ভারত থেকে যে ২০টি সংস্থাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে মাত্র দু’টি প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে। একটি পণ্ডিচেরির হাসপাতাল এবং অন্যটি পশ্চিমবঙ্গের আইপিজিএমইআর অর্থাৎ এসএসকেএম। গত দুই মাস ধরে এই খবর প্রকাশ্যে আসেনি। মুখ্যমন্ত্রীই প্রথম এই খবর প্রকাশ্যে আনেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত উদযাপন করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১০ লক্ষ টাকার আর্থিক উপহার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, এই টাকার জন্য কোনও কাজ করতে হবে না। এই টাকা দিয়ে গেট–টুগেদার অর্থাৎ আনন্দ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আবার প্রমাণ করল যে, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মান আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে।
এদিন মমতা জানিয়েছেন, ২০১১ সালে স্বাস্থ্যখাতে মাত্র ৩ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বাজেট ছিল। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। রাজ্যের আট কোটির বেশি মানুষ স্বাস্থ্যসাথীতে পরিষেবা নিয়েছেন। দিনে ৭ হাজার রোগী এই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিষেবা পান। স্বাধীনতার আগে থেকে তৃণমূল আসার আগের পর্যন্ত রাজ্যে মেডিক্যালে সিট ছিল ১৩৫৫ টা। রাজ্যে পালাবদলের পর এখনও পর্যন্ত তা বেড়ে ৫৭০০টি হয়েছে। এদিন তাঁর মুখে উঠে আসে স্বাস্থ্য বিমায় জিএসটি ছাড়ের প্রসঙ্গ। তিনিই যে এই দাবি প্রথম করেছিলেন তা ফের একবার মনে করিয়ে দেন মমতা। কিন্তু বর্তমানে অনেকে এর কৃতিত্ব দাবি করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। মমতা জানিয়েছেন, অনেকেই জানে না স্বাস্থ্য বিমায় জিএসটি ছাড় হওয়ায় রাজ্যের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে।