অমিত সিং দেও, মানবাজার: সেল-পারচেজ-সেফ কাস্টডি। বেআইনি অস্ত্র কারবারে জঙ্গলমহল যোগ! উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ এবং খাস কলকাতার বিবাদী বাগে বেআইনি অস্ত্র কারবারের তদন্তে উঠে এল পুরুলিয়ার নাম। সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্রের দোকানে মেয়াদ উত্তীর্ণ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলত বেআইনি কারবার! তদন্তে নেমে পুরুলিয়া থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করল এসটিএফ।
ধৃতের নাম শেখ মনু। তার বাড়ি পুরুলিয়ার ঝালদা থানার হুসেনডি গ্রামে। ধৃতের বিরুদ্ধে ঝালদা থানায় বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক মামলা রয়েছে। বর্তমানে মাঝবয়সি ওই ব্যক্তি শহর পুরুলিয়া ঘেঁষা টামনা থানার দুলমি এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। মঙ্গলবার রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা পুরুলিয়ায় হানা দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পাশাপাশি পুরুলিয়া শহরের দশের বাঁধ মোড়ে ওই বন্দুকের দোকানও সিল করে দেয়। সেখানে মজুত থাকা অস্ত্রের নথিপত্র নিয়ে ওই দোকানের মালকিন সুশীলা আধিয়াকে কলকাতায় তলব করেছে এসটিএফ।
গত ৪ আগস্ট উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ পুর শহরের রহড়া রিজেন্ট পার্কের একটি আবাসনে হানা দেয় এসটিএফ। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও নগদ টাকা। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে এসটিএফ জানতে পারে বেআইনি অস্ত্র কারবারে যোগ রয়েছে উত্তর কলকাতার একটি বহু পুরনো নামজাদা আগ্নেয়াস্ত্রের দোকানের। ফলে গত ৪ সেপ্টেম্বর ওই বন্দুক দোকানে হানা দিয়ে তিন মালিককে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার কলকাতা থেকে বেঙ্গল এসটিএফের একটি দল পুরুলিয়ায় আসে।
তদন্তকারীরা শহরের দশেরবাঁধ মোড়ে গান হাউসে হানা দেন। পরে দুলমি এলাকা থেকে আটক করা হয় শেখ মনুকে। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দশেরবাঁধ মোড়ে গান হাউসটি শেখর আধিয়ার নামে ছিল। সেখানে বন্দুক-গুলি কেনাবেচা ছাড়াও লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক ভাড়া দিয়ে হেফাজতে রাখা হত। ২০১০ সালে শেখর আধিয়া মারা যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন দোকানটি বন্ধ থাকে। তারপর ওই দোকানের মালকিন তারাপদ নামে এক কর্মচারীকে দিয়ে দোকানটি পুনরায় চালু করেন। পরে তারাপদকে সরিয়ে সেই জায়গায় শেখ মনু আসে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওই দোকান থেকে বন্দুক-গুলি কেনাবেচার কোনও বৈধ লাইসেন্স ছিল না। তবে পূর্বে জমা হওয়া বহু আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি এখনও ওই দোকানেই সেফ কাস্টডিতে আছে। ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এবং ২২ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) ওই দোকানটি পরিদর্শনে গিয়ে দোকানের মালকিন সুশীলা আধিয়াকে পাননি। ফলে এই মর্মে তৎকালীন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ)
অরিন্দম বিশ্বাসের সই করে একটি নোটিস দোকানের বাইরে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। সুশিলাকে তলব করে প্রশাসন।
তবে ওই নির্দেশের পরেও সুশীলা আধিয়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করেননি বলে অভিযোগ। এদিন ওই দোকানের মালকিন সুশীলা অধিয়া বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর পর সংসার চালাতে চরম সমস্যায় পড়েছিলাম। ফলে দোকানের এক কর্মচারীকে বিশ্বাস করে দোকানটি পুনরায় চালু করেছিলাম। কে জানে ওই কর্মচারী কী করেছে। পুলিশ আধিকারিকরা রেজিস্টার ও বন্দুক দেখে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাই আমাকে বৈধ নথি নিয়ে কলকাতায় দেখা করতে বলা হয়েছে।” তবে তাঁকে শেখ মনু সম্পর্কে প্রশ্ন করতে তিনি জানান, “ও পার্টনার ছিল। কাঠের ব্যবসা করে। ওর ব্যবসা আলাদা, আমার ব্যবসা আলাদা। ওর সঙ্গে জড়াবেন না।”
যদিও পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে মনুর এই দোকানের মালকিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। সুশীলার বাড়িতেও তার অবাধ যাতায়াত ছিল। বেআইনি অস্ত্র কারবার চালাত। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে পূর্বে যে সমস্ত বন্দুক ওই দোকানে জমা পড়েছিল তার সঙ্গে রেজিস্ট্রারের মিল নেই। ফলে ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে আরও তথ্য পেতে চায় এসটিএফের তদন্তকারীরা।