• প্রাচীন সংস্কৃতির শিকড়ের খোঁজ, পর্যটন মানচিত্রে ডুয়ার্সকে নতুনভাবে চেনাতে সিনেমা বানালেন জলপাইগুড়ির ক্যান্সারজয়ী যুবক
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন সংস্কৃতির খোঁজ। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা সেই সংস্কৃতি এবার সেলুলয়েডে। পর্যটন মানচিত্রে ডুয়ার্সকে নতুনভাবে চেনাতে ৫২ মিনিটের সিনেমা বানালেন জলপাইগুড়ির ক্যান্সারজয়ী পরিচালক অভ্রদীপ ঘটক। ‘আনন্দমঠ’ নামে ওই সিনেমায় দেখা যাবে গোরুমারার প্রথম গাইড থেকে বাঁশের শিল্পী কিংবা ভাওয়াইয়া শিল্পীকে। সিনেমার টিজারে মুগ্ধ প্রশাসনের কর্তা থেকে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ছবির পরিচালক বলেন, ‘ডুয়ার্সে একসময় বৌদ্ধতন্ত্রের প্রভাব ছিল। কয়েক হাজার বছরের পুরনো সেই সংস্কৃতির ছাপ আজও রয়ে গিয়েছে। তারই সঙ্গে মিশেছে বিভিন্ন জনজাতির সংস্কৃতি। সবমিলিয়ে ডুয়ার্স অনবদ্য। ছবিতে সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে।’ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনেত্রী অপরাজিতা ঘোষ। বিদেশে পড়াশোনা করলেও বৌদ্ধতন্ত্রের রূপরেখা নিয়ে গবেষণার কাজে শিকড়ের টানে ফিরে আসেন তিনি। ডুয়ার্সের পথে একের পর এক প্রাচীন নিদর্শন মুগ্ধ করে তাঁকে। সেসবের ইতিহাস খুঁজে ফেরার পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে চিঠি লেখেন বন্ধুকে। ওই চিঠি ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে গোটা সিনেমা। ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার অধীন পেটকাটি, জটিলেশ্বর, জল্পেশ মন্দির। সঙ্গে রয়েছে গজলডোবার অপরূপ সৌন্দর্য। লাটাগুড়ির জঙ্গল, বন্যপ্রাণ, পর্যটন, হোম স্টে। ডুয়ার্সের ট্রাডিশনাল পোশাক, খাবার-দাবার, জনজীবন। পুরনো সিল্করুট। হিউয়েন সাংয়ের যাত্রাপথ।ময়নাগুড়ির মরাখাওয়া নদীর তীরে প্রাচীন কালীমূর্তি উদ্ধার করেছিলেন ব্যাঙকান্দি গ্রামের বাসিন্দারা। ওই বিগ্রহ ঘিরে তৈরি হয়েছে মন্দির। যা পেটকাটির মন্দির নামে পরিচিত। বিগ্রহের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে সিনেমায়। বলা হচ্ছে, কালো পাথরে তৈরি ওই মূর্তি আসলে বজ্রযানী বৌদ্ধ দেবী ‘চচিকা’। দশভূজা বিগ্রহের ডান ও বামদিকের দু’টি করে হাত ভাঙা। ডানদিকের হাতে হাতি, কঙ্কাল, বাদ্যযন্ত্র, বাঁদিকের হাতে ঘণ্টা, ছিন্নমুণ্ড ও শবদেহ। দেবীর গলায় জড়ানো সাপ, কর্ণাভরণ এবং মুকুটেও সাপের অবয়ব। পদ্মপ্রান্তে বসে রয়েছেন যক্ষ্মিণী। একদিকে শেয়াল, অন্যদিকে ময়ূর। পদ্মাসনা দেবীর নাক ভাঙা। বক্ষদেশের নীচে পাঁজরে বৃশ্চিকমূর্তি। দেবীর উদর কঙ্কালসার। সম্ভবত এর থেকেই নাম পেটকাটি। জল্পেশ থেকে ৬ কিমি দূরে চূড়াভাণ্ডার গ্রামে অবস্থিত জটিলেশ্বর মন্দিরটিও স্থান পেয়েছে সিনেমায়। সপ্তরথ নকশার এই মন্দিরের স্থাপত্যকলা দেখার মতো। মন্দিরের দেওয়ালে যক্ষ্মিণী, গণেশ, বুদ্ধ, কুবেরের মূর্তি। এখানে শিবলিঙ্গ গর্তের ভিতর থাকে। যাকে বলা হয় অনাদি। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এখানকার বিষ্ণুপাটকে অমূল্য সম্পদ বলে উল্লেখ করেছেন।  অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের অন্যতম সদস্য তন্বিষ্ঠা রক্ষিত ছবির প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর কথায়, শুধু প্রকৃতি কিংবা জঙ্গলের টানে ডুয়ার্সে ঘুরতে আসা নয়, পর্যটকরা যাতে এখানকার প্রাচীন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সবটাই জানতে পারেন, সেই লক্ষ্যে সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে। ছবিতে গল্প বলতে দেখা যাবে গোরুমারার প্রথম গাইড মঙ্গল কোরা’কে। নিজের অভিজ্ঞতার ঝাঁপি উজাড় করে দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও ছবিতে রয়েছেন শিল্পী রণজিৎ রায়। তাঁর হাতে তৈরি বাঁশের কারুকার্য পর্যটকদের কাছে ডুয়ার্সকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। রয়েছেন হোম স্টে’র প্রতিনিধি উডেন লেপচা, সানডে হাটের উদ্যোক্তা সংযুক্তা বসু। অভ্রদীপ ঘটকের সঙ্গে যৌথভাবে ছবিটি পরিচালনা করেছেন পদ্মপর্ণা মুখোপাধ্যায়। 
  • Link to this news (বর্তমান)