গঙ্গার বাঁধ ভেঙে বানভাসি ভূতনির চরের দেড় লক্ষ মানুষ
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজ থেকে এক মাস আগে জলের চাপে মানিকচক ব্লকের দক্ষিণ চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাটা বাঁধ এলাকায় ফুলহরের বাঁধ ভেঙে যায়। এবারে রতুয়া এক নম্বর ব্লকের বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম রতনপুর গ্রামে গঙ্গার বাঁধ ভেঙে পড়ল। ভূতনি চরে তীব্র গতিতে ঢুকে পড়তে শুরু করেছে বাঁধভাঙা জল। জল ঢুকে পড়েছে ঘরবাড়ির ভিতরে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে বাড়ছে ফুলহর এবং গঙ্গা নদীর জলস্তর। পুজোর মুখে ভূতনি চরের দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষের অবস্থা উদ্বেগজনক। প্রশাসনের তরফ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে যাতে ওখানে বসবাসকারী মানুষকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারি ফ্লাড শেল্টার অথবা কোনো উঁচু জায়গায় সরানো যায়।
গত ১৩ আগস্ট ফুলহরের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে সকলে মনে করেছিল ফুলহরের জলস্তর কমতে সময় লাগবে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই জলস্তর নামতে শুরু করে। ভূতনির নিচু এলাকাগুলি গতকাল পর্যন্ত জলের তলায় ছিল বটে তবে মানুষের খুব একটা অসুবিধা হচ্ছিল না। আজ গঙ্গার জল আবার গোটা চরকে গ্রাস করে নেওয়ায় আবার পুরো এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন নৌকা করে যাতায়াত করতে হচ্ছে সকলকে। বাঁধের যে অংশটি এখনও ভাঙেনি সেটিকে বাঁচানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে সেচ দপ্তরের তরফ থেকে। স্থানীয়দের প্রশ্ন ৬ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে এই বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। সেটিকে আরও সুরক্ষা দিতে অস্থায়ী রিং বাঁধও তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন বাঁচানো গেল না বাঁধটিকে? মানিকচক ব্লক অফিসে জরুরি বৈঠক করেছেন জেলাশাসক নিতীন সিংহানিয়া। তিনি সরকারি কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন যাতে শৌচাগার, ওষুধপত্র, খাদ্য, পানীয় জল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কোনো ঘাটতি না হয়।
সমস্যা তৈরি হয়েছে দুই নদীর ক্রমাগত জলস্তর বৃদ্ধি নিয়ে। মঙ্গলবার সকাল আটটায় গঙ্গার জলস্তর ছিল ২৫.৩৩ মিটার এবং সেই জলস্তর ছিল বিপদসীমার থেকে ৩ সেন্টিমিটার বেশি। ফুলহরের জলস্তর রয়েছে ২৭.৯৭ মিটার উচ্চতায় যা বিপদসীমার থেকে ৫৪ সেন্টিমিটার উঁচুতে রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন শুরু হয়ে গিয়েছে। মৌসুমী বায়ু প্রত্যাবর্তনের সময় ব্যপক বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং তার জন্যই সারা দেশ জুড়ে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী ভূতনি চরে আরও বিপদ আসতে চলেছে।
বসন্তটোলা গ্রামের জনৈক সুভাষ চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘বাঁধ ভেঙেছে রামপীরিতটোলা আর বসন্তটোলার মাঝামাঝি জায়গায়। এখনও পর্যন্ত এখানে কেউ আসেননি৷ প্রশাসনের লোকজনও এখানে আসেনি৷ আমাদের পরিস্থিতি ভালো নয়৷ এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনও সাহায্য পাইনি৷ ত্রিপল টাঙিয়ে তার নীচে থাকছি৷ আমার আর কিছু বলার নেই৷’
এই মুহূর্তে গঙ্গার জল ঢুকছে রামপীরিতটোলা, বসন্তটোলা, গোবর্ধনটোলা, দুর্লভটোলা প্রভৃতি বেশকিছু গ্রামে। মহকুমাশাসক পঙ্কজ তামাং জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি বিচার করে মথুরাপুরে আপাতত ২টি ফ্লাড শেল্টার খোলা হয়েছে৷ দুর্গত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী, ওষুধপত্র, পানীয় জল, বিদ্যুতের ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ ত্রাণের সামগ্রী দুর্গতদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে৷ আমাদের কাছে খবর আছে, গঙ্গার বাঁধভাঙা জলে এখনও পর্যন্ত চরের ন’টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে৷ তবে যে গতিতে দুটি নদীর জলস্তর বাড়ছে তাতে আরও কিছু গ্রাম প্লাবিত হতে পারে৷ পরিস্থিতির উপর নজর রেখে চলেছে প্রশাসন৷ সেচ দপ্তর বাঁধের বাকি অংশ রক্ষা করার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে৷’