সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আদিবাসী তালিকাভুক্তের দাবিতে ফের পুজোর মুখে অনির্দিষ্টকালীন রেল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি নিয়েছেন কুড়মিরা। ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে এই অনির্দিষ্টকালীন রেল টেকা ও ডহর ছেঁকা আন্দোলনে নামছেন তাঁরা। কুড়মিরা রেললাইন অবরোধ করলে কীভাবে মোকাবিলা করবে রেল পুলিশ! সেই বিষয়ে আরপিএফ ও জিআরপি মঙ্গলবার যৌথভাবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনে কুস্তাউর রেল স্টেশনের পাশে মক ড্রিল করে। ওই মহড়ায় উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে কীভাবে আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
২০২৩ সালে এই রেল অবরোধকে কলকাতা হাই কোর্ট অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক বলে রায় দিলেও তারপরেও বাংলা, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা মিলিয়ে মোট তিন রাজ্যের মানুষকে সমস্যায় ফেলতে এই আন্দোলন বলে জঙ্গলমহলের মানুষের অভিমত। ফলে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মধ্যেই এই আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। ওই সামাজিক সংগঠনের একটি শিবির চাইছে না এইভাবে রেল ও সড়ক অবরোধ করা হোক।
এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০২৩-র মতো চলতি বছরেও জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। যার শুনানি আগামী বৃহস্পতিবার। এই অবরোধ আন্দোলনকে একেবারে হালকা ভাবে দেখছে না পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। পুজোর মুখে সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, শান্তি বিঘ্নিত না হয় সেই কথা মাথায় রেখে কড়া পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগামী বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের শুনানি রয়েছে। সেই রায়ের দিকে আমরা তাকিয়ে রয়েছি। হাই কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’ আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো জানিয়েছেন, মৌলিক অধিকার আদায়ে তাঁরা জীবন দিতে প্রস্তুত। সব মিলিয়ে পুজোর মুখে জঙ্গলমহলে প্রশাসন ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘাত চরমে।
কুড়মি সমাজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলা, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা মিলিয়ে তিন রাজ্যের রেল ও সড়ক অবরোধ হবে ১০০টি পয়েন্টে । তার মধ্যে জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম-মেদিনীপুর এলাকায় রেল ও সড়ক অবরোধের পয়েন্ট রয়েছে প্রায় ৪৫ টি। পুরুলিয়াতেই সবচেয়ে বেশি ৪০টি। এই কর্মসূচি তাঁরা সফল করার জন্য বিভিন্ন স্টেশনে স্টেশন ম্যানেজারকে লিখিত আকারে জানিয়েছেন।
আদিবাসী তালিকাভুক্তের দাবিতে আদিবাসী কুড়মি সমাজ প্রায় ২০১৫-১৬ আর্থিক বছর থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। পুজোর মুখে সড়ক অবরোধের কর্মসূচি চলছে বেশ কয়েকবছর ধরে। ২০২২ সালে টানা ৫ দিন রেল অবরোধ হয়েছিল। সেই সঙ্গে ৩ দিন চলেছিল সড়ক অবরোধও। ২০২৩-এ কলকাতা হাই কোর্ট এই আন্দোলনকে অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক বলায় তাঁরা বাধ্য হন আন্দোলন প্রত্যাহার করতে। ২০২৪-এও তাঁরা পুজোর আগে রেল অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁদের আলোচনার পর তাঁরা তা তুলে নেন। আদিবাসী তালিকাভুক্তের দাবি সমর্থন না হওয়ায় ওই সামাজিক সংগঠন কেন্দ্রকে ব্যাপক দোষারোপ করেছে তাঁদের প্রচার পত্রে। একইভাবে রাজ্যেরও সমালোচনা করে কমেন্ট-জাস্টিফিকেশন না পাঠানোর কারণে।
আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “আমাদের এই মৌলিক অধিকার এবং দাবির বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট ও বাংলা, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিদেরকে জানিয়েছি। কিন্তু কোথাও কোনও কিছু সাড়া পাইনি। তাই বাধ্য হয়েছি এই বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে। এবার আমরা জীবন দিতেও প্রস্তুত।”
কিন্তু যেভাবে এই সামাজিক সংগঠনের মধ্যে এই আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে তাতে আদৌও ২০ তারিখ থেকে এই আন্দোলন সংগঠিত করা যাবে কি না, তা বুঝতে পারছেন না ওই সামাজিক সংগঠনের উচ্চ নেতৃত্ব।
তবে ওই সামাজিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, তারা কেন্দ্রীয়ভাবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের পুরুলিয়া-চান্ডিল শাখায় কুস্তাউর রেল স্টেশনের পাশাপাশি পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক, চাষ মোড়-তুলিন রাজ্য সড়ক, পুরুলিয়া-জামশেদপুর ১৮ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং ঝাড়গ্রাম-মেদিনীপুর এলাকার জাতীয় সড়কেও অবরোধ করবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।