কুণাল ঘোষ: পুলিশকে নিয়ে অনেক সিনেমা হয়, এবার পুরোদস্তুর সিনেমা তৈরি করলেন কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের কর্মীরা। সত্যজিৎ রায়ের জীবনী অবলম্বনে, বিশেষভাবে নানা প্রতিকূলতা ভেঙে তাঁর সংগ্রামের কাহিনিকে নিয়ে তৈরি এই সিনেমার নাম ‘অপু এবং আমি’। আসন্ন কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের আবেদন নিয়ে এই সিনেমা কর্তৃপক্ষের কাছে জমাও দিয়েছেন তাঁরা।
সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’ তৈরির লড়াইকে ঘিরে ছবি তৈরির উদ্যোগ নেন ভবানী ভবনে কর্মরত কিছু পুলিশ অফিসার ও কর্মী। টিমে শামিল হন কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের আরও কয়েকজন। পরিচালক ডি সাধু সাব ইন্সপেক্টর। তিনি নিজে সত্যজিৎবাবুর ভূমিকাতেও অভিনয় করেছেন। পুজোর পর সিনেমার প্রথম প্রদর্শন। উৎসাহ দিয়েছেন পদস্থ পুলিশকর্তারা, যেমন ডিজি রেল দেবাশিস রায়, ডিআইজি সুখেন্দু হীরা, কঙ্করপ্রসাদ বারুই প্রমুখ। মোট দুঘণ্টা সাড়ে চার মিনিটের সিনেমা।
পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কয়েকজন পেশাদার অভিনেতা ও টেকনিশিয়ান আছেন। সহকারী পরিচালক রবিশঙ্কর চক্রবর্তী। চিত্রগ্রহণে দেবাশিস মণ্ডল। এই সিনেমা তৈরিও একটা লড়াই ছিল পুলিশ কর্মীদের। কাজের ফাঁকে সময় বার করে করে শুটিং। অর্থসংকট। একটি খারাপ অভিজ্ঞতাও হয়। এঁরা এঁদের ভাবনা নিয়ে প্রথমে গিয়েছিলেন এক প্রযোজকের কাছে। তিনি বিবেচনার জন্য সময় নেন। তারপর দেখা যায় ওই প্রযোজক এক অন্য পরিচালককে দিয়ে সত্যজিৎবাবুর উপর সিনেমা করিয়ে নিয়েছেন। এঁরা বিস্মিত হন, মর্মাহত হন। কিন্তু আবার নতুন উদ্যমে নিজেদের ‘আসল’ ছবি শেষ করতে নেমে পড়েন।
বছর ঘুরে যায়, সময় লাগে, কিন্তু এখন ফিচার ফিল্ম তৈরি। ইন্সপেক্টর অনুপ নাথ, সাব-ইন্সপেক্টর কুশলেশ সিং-সহ একঝাঁক পুলিশকর্মী অভিনব এই উদ্যোগে যুক্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজের পাশে এমন সৃষ্টিশীল কর্মযজ্ঞে উৎসাহ দিয়েছেন সহকর্মী, বড়কর্তারা।
কাশবনের মধ্য দিয়ে অপু-দুর্গার প্রথম রেলগাড়ি দেখার দৃশ্যটিও শুটিং হয়েছে দারুণভাবে। পরিচালকের কথায়, “আগের ছবির থেকে আমাদের এই আসল ছবি আলাদা।” পরিচালক দেখিয়েছেন সত্যজিৎবাবুর ‘পথের পাঁচালি’ তৈরির লড়াই। অপুকে ঘিরেই সত্যজিৎ রায় যেন নিজের লড়াইটা চালিয়েছেন। পুলিশ কর্মীরা আশাবাদী, সিনেমা তৈরির এই নজিরবিহীন উদ্যোগ স্বীকৃতি পাবে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে। সেই আশা নিয়েই বিবেচনার জন্য ছবিটি জমা করলেন তাঁরা।