• আদালতের আদেশে আদানি গ্রুপ নিয়ে ১৩৮ ভিডিও ও ৮৩ ইনস্টাগ্রাম পোস্ট সরানোর নির্দেশ, সাংবাদিক-অ্যাক্টিভিস্টদের ক্ষোভ...
    আজকাল | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  আদানি গ্রুপকে ঘিরে চলতে থাকা  বিতর্কের মাঝেই কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুইটি সংবাদমাধ্যমসহ একাধিক ইউটিউব চ্যানেলকে নোটিস পাঠিয়েছে। নোটিসে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপকে উল্লেখ করে প্রকাশিত মোট ১৩৮টি ভিডিও ও ৮৩টি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট অবিলম্বে সরাতে হবে।

    এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে দিল্লির উত্তর-পশ্চিম জেলার দেওয়ানি আদালতের ৬ সেপ্টেম্বরের এক ex parte (একতরফা) আদেশের ভিত্তিতে। আদানি এন্টারপ্রাইজেস একটি মানহানির মামলা দায়ের করার পর ওই আদেশ দেওয়া হয়। আদালত সাংবাদিক পরাঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা, রবি নায়ার, অভীর দাশগুপ্ত, আয়াসকান্ত দাস ও আয়ুষ জোশিকে তাঁদের আর্টিকেল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট মুছে ফেলতে বলে, যেগুলো আদানি গ্রুপকে মানহানিকর বলে দাবি করা হয়েছে। একতরফা আদেশ সাধারণত তখনই দেওয়া হয়, যখন মামলার সব পক্ষকে শোনার সুযোগ দেওয়া হয় না। ফলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্টরা নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করার সুযোগ পাননি।

    তবে মঙ্গলবার যাঁরা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের নোটিস পেয়েছেন, তাঁরা এই মামলার পক্ষ নন। The Wire–কে একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টের জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে, যেখানে মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC)–এর আদানি গ্রুপ নিয়ে অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এটি আসলে রেকর্ডভুক্ত তথ্য। এছাড়া নোটিস পাঠানো হয়েছে Newslaundry, সাংবাদিক রবিশ কুমার, অজিত অঞ্জুম, ইউটিউবার ধ্রুব রাঠী, আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে ‘দেশভক্ত’সহ আরও কয়েকজনকে। তালিকায় থাকা অনেক ভিডিওতে নতুন কোনো তথ্য বা মতামত ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, Newslaundry–এর একটি ভিডিও কেবল সাবস্ক্রিপশন আহ্বানমূলক, যেখানে আদানি গ্রুপ সম্পর্কিত একটি আর্টিকেলের স্ক্রিনশট ব্যবহৃত হয়েছিল।

    মন্ত্রকের চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকাশিত কনটেন্ট আদালতের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সরানো হয়নি। তাই নতুন করে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যাতে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সব কনটেন্ট সরিয়ে ফেলার প্রমাণ জমা দিতে হবে। নোটিসের কপি মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনক. এবং গুগল ইনক.–কেও পাঠানো হয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বরের আদেশ নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। বিচারপতি অনুজ কুমার সিং বলেন, মামলা একতরফা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের শর্ত পূরণ করেছে। তবে তিনি সাংবাদিকদের “ন্যায্য, যাচাইযোগ্য ও প্রমাণসাপেক্ষ রিপোর্টিং” করার অধিকার অস্বীকার করেননি।

    সাংবাদিক পরাঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা প্রতিক্রিয়ায় জানান, তিনি আদানি গ্রুপের করা সাতটি মানহানির মামলা আদালতে লড়বেন। তাঁর বক্তব্য, “ভারতের বিচার ব্যবস্থার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমি যেসব আর্টিকেল লিখেছি বা বক্তব্য রেখেছি, সবই সত্যনিষ্ঠ, যথাযথ এবং জনস্বার্থে। আমি দৃঢ়ভাবে এই মানহানির মামলাগুলির মোকাবিলা করব।”

    এই ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলছে—ভারতে শক্তিধর কর্পোরেট গ্রুপ ও সমালোচনামূলক সাংবাদিকতার মধ্যে সংঘাত কতটা তীব্র হয়ে উঠছে। সমালোচকদের মতে, আদালতের একতরফা আদেশ ও মন্ত্রকের তড়িঘড়ি পদক্ষেপ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের ওপর নতুন করে চাপ তৈরি করছে।
  • Link to this news (আজকাল)