• আসাদুদ্দিন ওয়াইসি...
    আজকাল | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  সুপ্রিম কোর্ট সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ওয়াক্‌ফ সংশোধনী আইন, ২০২৫-এর বেশ কিছু বিতর্কিত ধারার কার্যকারিতা স্থগিত রাখলেও পুরো আইনের উপর স্থগিতাদেশ দেয়নি। এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) প্রধান ও হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। তাঁর অভিযোগ, এই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশকে ব্যবহার করে বিজেপি গোটা দেশের ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি “ধ্বংস” করতে চাইবে।

    প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই. গাভাই ও বিচারপতি এ.জি. মাসিহের বেঞ্চ জানিয়েছে, যেসব ধারায় জেলা কালেক্টরকে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির মালিকানা নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল তা আপাতত প্রয়োগ করা যাবে না। এছাড়া, আইন অনুযায়ী অন্তত পাঁচ বছর ইসলাম ধর্মে অনুশীলন না করলে কোনও ব্যক্তি তাঁর সম্পত্তি ওয়াক্‌ফে দিতে পারবেন না—এই বিধানও কার্যকর করা যাবে না, যতক্ষণ না সরকার প্রয়োজনীয় নিয়মাবলি প্রণয়ন করে। তবে আদালত স্পষ্ট করেছে এটি “সম্পূর্ণ স্থগিতাদেশ” নয়। ওয়াইসির আশঙ্কা, বিজেপি নিয়ম প্রণয়নের মাধ্যমে নতুন ফাঁদ তৈরি করবে।

    অন্যদিকে, আদালত কেন্দ্রীয় ওয়াক্‌ফ কাউন্সিলে সর্বাধিক চারজন এবং রাজ্য ওয়াক্‌ফ বোর্ডে সর্বাধিক তিনজন অমুসলিম সদস্য রাখার অনুমতি দিয়েছে। তবে রাজ্য ওয়াক্‌ফ বোর্ডের সিইও হিসেবে অমুসলিম নিয়োগের ধারায় কেবলমাত্র সুপারিশ করেছে—“যতটা সম্ভব মুসলিম নিয়োগ করা উচিত।” ওয়াইসির মতে, এই বাক্যাংশ সরকারকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেবে অমুসলিম কর্মকর্তাদের বসানোর।

    সবচেয়ে বিতর্কিত সংশোধনীগুলির একটি হলো—ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা (ASI)-এর সুরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ কোনওভাবেই ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে না। ওয়াইসি বলেন, বহু ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি ৩০০ বছরেরও পুরোনো। কিন্তু এএসআই, যা ব্রিটিশ আমলে গঠিত হয়েছিল এবং ১৯৫৮ সালের প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ আইন (AMASR) অনুযায়ী পরিচালিত হয়, এখন সেই সম্পত্তির ওপর কর্তৃত্ব করবে। তাঁর মতে, এর সরাসরি প্রভাব পড়বে উত্তরপ্রদেশের সম্ভল শাহী জামে মসজিদ মামলায়। সেই মসজিদ নিয়ে চলতি বছরই হিংসা হয়েছিল, যাতে চারজন মুসলিম নিহত হন।

    নতুন আইনে বলা হয়েছে, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত অঞ্চলের উপজাতিদের জমি কোনওভাবেই ওয়াক্‌ফ হতে পারবে না। ওয়াইসি প্রশ্ন তুলেছেন—এক্ষেত্রে লক্ষদ্বীপের সাংসদ ও মুসলিম উপজাতি মুহম্মদ হামদুল্লাহ সায়িদ নিজের ধর্মীয় অধিকারের প্রয়োগ করতে পারবেন না কেন?

    আইনে পরিবর্তনের মাধ্যমে ১৯৯৫ সালের আইনের ১০৭ নম্বর ধারা বাতিল করা হয়েছে, যেখানে বলা ছিল লিমিটেশন অ্যাক্ট ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এখন তা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি যদি ১২ বছর ধরে অবৈধভাবে ওয়াক্‌ফ জমিতে বসবাস করেন, তবে তিনি জমির মালিকানা দাবি করতে পারবেন। ওয়াইসির মতে, এতে দখলদাররা পুরস্কৃত হবেন এবং মুসলিম সমাজের সম্পত্তি হাতছাড়া হবে।

    সর্বভারতীয় মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডও এই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশকে “অসম্পূর্ণ ও অসন্তোষজনক” বলে অভিহিত করেছে এবং পুরো সংশোধনী আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। ওয়াইসি বলেছেন, তিনি AIMPLB-র অবস্থানের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তাঁর কথায়, “এই আইনের মূল উদ্দেশ্যই হলো ওয়াক্‌ফ বোর্ডগুলিকে কেন্দ্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ধীরে ধীরে তাদের কাঠামো ভেঙে দেওয়া।”

    ওয়াইসি সতর্ক করেছেন যে এই রায়ের ফলে শুধু প্রশাসনিক জটিলতা বাড়বে না, বরং ধর্মীয় সম্পত্তির উপর মুসলিম সমাজের ঐতিহাসিক অধিকারও প্রশ্নের মুখে পড়বে। তিনি বলেন, “রাম জন্মভূমি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নিজেই ‘ওয়াক্‌ফ বাই ইউজার’ স্বীকার করেছে। অথচ এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে বোর্ডের রেজিস্ট্রি বা সমীক্ষার  ব্যর্থতাকে অজুহাত করে সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হবে।”

    ওয়াইসির অভিযোগ, বিজেপি সরকারের প্রণীত সংশোধনীগুলির মাধ্যমে একদিকে যেমন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির নতুন দান নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, অন্যদিকে বিদ্যমান সম্পত্তি ধীরে ধীরে মুসলিম সমাজের হাতছাড়া করানো হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে, সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে কিছু বিতর্কিত ধারা স্থগিত হলেও, মুসলিম সংগঠন ও নেতৃত্বের মতে এর ফাঁকফোকর ব্যবহার করে বিজেপি সরকার দেশজুড়ে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে।
  • Link to this news (আজকাল)