"যুদ্ধের প্রকৃতি বদলাচ্ছে, তাই আরও শক্তিশালী ও সচেতন হতে হবে"! অদৃশ্য হুমকি মোকাবিলায় সেনাকে প্রস্তুত থাকার বার্তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর...
আজকাল | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বের দরবারে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে ভারত সরকার তার প্রতিরক্ষা বিভাগকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে ব্রত হয়েছেন। আর সেই আবহে এদিন মঙ্গলবার ১৬ সেপ্টেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং স্পষ্ট ভাষায় জানালেন- আজকের যুদ্ধ কেবল সীমান্তে বন্দুকের গর্জন নয়, বরং তথ্য, মতাদর্শ, পরিবেশ এবং জৈব অস্ত্রের মতো অদৃশ্য অস্ত্রও সমান বিপজ্জনক। তাই ভারতীয় সেনাকে এখন যুদ্ধের প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে নতুন প্রজন্মের হুমকির মোকাবিলার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আয়োজিত কম্বাইন্ড কম্যান্ডার্স কনফারেন্স ২০২৫-এ ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতা, আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা ও উদীয়মান নিরাপত্তা সংকটের প্রেক্ষাপটে প্রতিরক্ষার চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “যুদ্ধের প্রকৃতি বদলাচ্ছে। আজকের লড়াই অনিশ্চিত- তা দুই মাসও চলতে পারে, আবার পাঁচ বছরও হতে পারে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য।”
তিনি স্পষ্ট করে জানান, ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তি আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার সমন্বয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের “সুদর্শন চক্র” গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে একটি বিশেষ কমিটি কাজ করছে এবং আগামী ৫ ও ১০ বছরের জন্য মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
আধুনিকীকরণ ও আত্মনির্ভরতার পথে ভারত
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, “ভারতের প্রতিরক্ষা খাত আধুনিকীকরণ, প্রযুক্তিগত আধিপত্য ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধক্ষমতার উপর দাঁড়িয়ে।” প্রধানমন্ত্রী মোদির 'JAI' মন্ত্র (Jointness, আত্মনির্ভরতা, Innovation)-এর দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। বেসরকারি খাত, শিল্প ও শিক্ষাজগতকে একসঙ্গে এনে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন ব্যবস্থা গড়ার আহ্বান জানান।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং উল্লেখ করেন, "আত্মনির্ভর ভারত কোনও স্লোগান নয়। এটি কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের মূল চাবিকাঠি। দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প এখন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। শিপইয়ার্ড ও এরোস্পেস ক্লাস্টার গড়ে তুলছে। প্রতিরক্ষা করিডরকে শক্তিশালী করছে।" তিনি আরও বলেন, “এটা আত্মনির্ভরতার বহুগুণী প্রভাব।”
ত্রি-সার্ভিস সমন্বয় ও প্রযুক্তি
সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যৌথতা ও সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি জানান, ত্রি-সার্ভিস লজিস্টিক নোড এবং ত্রি-সার্ভিস লজিস্টিক অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হয়েছে। বেসামরিক ও সামরিক ব্যবস্থার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ও তৈরি হচ্ছে।
“অপারেশন সিন্দুর অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে শক্তি, কৌশল ও আত্মনির্ভরতা - এই তিনই ২১শ শতকে ভারতের মূল শক্তি”, মন্তব্য করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
নীতি পরিবর্তন ও ক্রয় প্রক্রিয়ার সংস্কার
এদিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ঘোষণা করেন, ডিফেন্স প্রোকিউরমেন্ট ম্যানুয়াল ২০২৫ ইতিমধ্যেই অনুমোদন করা হয়েছে, যা ক্রয় প্রক্রিয়াকে সহজ করবে। পাশাপাশি ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন প্রোসিডিওর ২০২০ সংশোধনের কাজ চলছে। পাশাপাশি দ্রুত কার্যক্ষম শক্তি সশস্ত্র বাহিনীর হাতে পৌঁছায়।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, এদিনের সভায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্যে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসে—যেখানে যুদ্ধ মানেই সীমান্তে গুলি নয়, বরং অদৃশ্য তথ্যযুদ্ধ, মতাদর্শের লড়াই, প্রযুক্তির আধিপত্য এবং আত্মনির্ভরতার শক্তি।
বলাবাহুল্য, ভারতের প্রতিরক্ষা এখন শুধু আজ নয়, আগামীকালের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে - একটি “ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত ভারতীয় সেনা” গড়ে তোলার লক্ষ্যে।