বিশ্বকর্মা পুজোর জন্যে কোথাও মণ্ডপ বাঁধা হচ্ছে, কোথাও মাইক বাজছে, কোথাও সাজিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপ। মূর্তিরও তুলনা নেই। কে কাকে টক্কর দেবে, তা নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। কোথাও আবার থিমপুজোরও আয়োজন করা হয়েছে। আর পুজো হচ্ছে কয়েক হাত দূরে দূরে। এক দোকান থেকে বেরিয়ে অন্য দোকানে, এক গলি থেকে বেরিয়ে অন্য গলিতে। বিকেলের পরে সন্ধের সময় মানুষের ঢলও নামে।
বিশ্বকর্মা আজ সর্বজনীন। অথচ একসময় বিশ্বকর্মাপুজো ছিল নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ। হাতে-গোনা কিছু মানুষ এই পুজোয় শামিল হতেন। অন্যদের শ্রদ্ধা-ভক্তি যে কম ছিল তা নয়, কিন্তু পুজোয় সে ভাবে অংশ নিতে দেখা যেত না সাধারণ মানুষকে। আসলে বিশ্বকর্মা দেবতার পাশাপাশি পরিণত হয়েছেন শ্রমজীবী মানুষের অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে। এই পুজো যেন শ্রম, প্রযুক্তি ও শিল্পের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
বিশ্বকর্মা দেবশিল্পী। যিনি সৃষ্টি, স্থাপত্য, শিল্প ও প্রযুক্তির দেবতা হিসেবে পরিচিত। হিন্দু পুরাণে এক মহান স্থপতি। বেদে তাঁকে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণিত রয়েছে, কৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা, রাবণের লঙ্কানগরী, এবং পাণ্ডবদের মায়াসভা নির্মাণ করেছিলেন তিনি। এক সময় দেখা যেত, শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের কারিগর সম্প্রদায়ের মধ্যে পুজো সীমাবদ্ধ ছিল। কারখানা, রিকশা স্ট্যান্ড, গাড়ি স্ট্যান্ডের মতো জায়গায় বিশ্বকর্মা পূজিত হতেন। আজ বিশ্বকর্মা পুজো ধর্ম, জাতি, পেশা ও সামাজিক বিভেদ অতিক্রম করে এক সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এটি এখন ধর্মীয় অনুষ্ঠানেই পাশাপাশি পেশাভিত্তিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে। অফিস, কারখানা, গ্যারাজ, নির্মাণস্থল, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে দিনটি ঘটা করে পালন করা হয়। মিস্ত্রি, কারিগর, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তিবিদেরাও দিনটি পালন করেন ‘শ্রমের মর্যাদা’ ও ‘দক্ষতার’ প্রতীক হিসেবে।
আরও একটি দিকও এই পুজোয় উঠে এসেছে। তা হল সম্প্রীতি। যে কোনও মণ্ডপে গেলে দেখা যাবে, নানা ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে বিশ্বকর্মা পুজো পালন করছেন। কিছু প্রতিষ্ঠান দিনটিকে কর্মদিবস হিসেবে পালন না করে ছুটি ঘোষণা করে।
বিশ্বকর্মাপুজো প্রতি বছর ভাদ্র সংক্রান্তিতে পালিত হয়। এ বছরও একই সময়ে শুরু হয়েছে পুজো। বাজারে-বাজারে উপচে পড়ছে পুজোর কেনাকাটার ভিড়। সর্বজনীন এক প্রতীক হিসেবে উঠে আসা বিশ্বকর্মা পুজো এক বার্তাও বহন করে। মানুষের মধ্যে ড়ে চলা সঙ্কীর্ণতা, ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে রেখে এক একাত্মবোধের বার্তা তুলে ধরে এই পুজো।