৭৫ বছরের ৭৫ ‘সাফল্য’ উঠে এল প্রদর্শনীতে, মোদীর জন্মদিন ‘অরাজনৈতিক’ বলেও রাজ্যকে রাজনৈতিক খোঁচা শমীকের
আনন্দবাজার | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৭৫ বছর পূর্ণ হল। তাই ৭৫ কৃতিত্বের প্রদর্শনী। কলকাতার জাদুঘরে বুধবার শুরু হল নরেন্দ্র মোদীর জীবন ও কাজ নিয়ে আয়োজিত প্রদর্শনী। প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। বললেন, ‘‘আজকের দিন কোনও রাজনৈতিক দিন নয়, নরেন্দ্র মোদীর সাফল্যকে মানুষের সামনে তুলে ধরার দিন।’’ কিন্তু ‘সাফল্যের’ তালিকায় কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের উল্লেখ করতে গিয়ে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিজেই টেনে আনলেন। কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পকে পশ্চিমবঙ্গে চলতে দেওয়া হয় না বলে মন্তব্য করলেন।
মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বে ভারত সরকারের নেওয়া যে সব বড় পদক্ষেপকে বিজেপি দেশের জন্য ‘মাইলফলক’ বলে মনে করে, প্রদর্শনীতে মূলত সে সবই তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে আবাস, শৌচালয়, বিনামূল্যে রেশন, ঘরে ঘরে রান্নার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া, বিনামূল্যে চিকিৎসা, গ্রাম ও শহরে কর্মসংস্থান তৈরির আলাদা আলাদা প্রকল্প-সহ ৬০টির বেশি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের কথা। জাতীয় সড়ক, রেল, সেতু, উড়ালপুল, মেট্রো-সহ পরিকাঠামো উন্নয়নের নানা কর্মকাণ্ডকে দেখানোর ব্যবস্থা হয়েছে। চন্দ্রযান অভিযান, গগনযান অভিযান, শুভাংশু শুক্লর মহাকাশ গমন, ডিজিটাল ক্ষেত্রের অগ্রগতিকেও প্রদর্শনীতে বিশদে দেখানোর ব্যবস্থা হয়েছে। আর সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক আবহের কথা মাথায় রেখে ভারতের সামরিক শক্তিবৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধি, সামরিক প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণাত্মক নীতি, পরমাণু হুমকির সামনে মাথা না-নোয়ানো এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণকে ভারতের মাটি স্পর্শ করতে না-দেওয়ার আখ্যানও তুলে ধরা হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে।
প্রদর্শনীতে গুরুত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের প্রসঙ্গ। বিশদ ছবি ও বিবরণ রয়েছে ১৯৯২ সালে কন্যাকুমারী থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে লালচকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন কর্মসূচির। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সে রাজ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন এনেছিলেন মোদী, আছে তারও খতিয়ান।
বিশ্ব জুড়ে কোভিড সংক্রমণের কালে মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার কী ভাবে সঙ্কটের সঙ্গে যুঝেছিল, তা-ও মনে করানো হয়েছে এই প্রদর্শনীতে। শমীকের ভাষণেও বুধবার সে কথা উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘‘কোভিডের সময়ে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে গোটা দেশকে আগলে রেখেছিলেন, যে ভাবে অজস্র সমালোচনার জবাব দিয়ে দেশেই দু’টো ভ্যাকসিন তৈরি করিয়েছিলেন, নিজের দেশকে রক্ষা করার পাশাপাশি যে ভাবে আরও অনেক দেশকে ওষুধ-ভ্যাকসিন পাঠিয়ে সহায়তা করেছিলেন, তা গোটা বিশ্বের কাছে শিক্ষনীয়।’’ শমীকের কথায়, ‘’৬০-এর বেশি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালিয়ে, বিনা পয়সায় কোভিড ভ্যাকসিন দিয়ে, ৮০ কোটি মানুষের কাছে বছরের পর বছর বিনামূল্যে রেশন পৌঁছে দিয়েও কী ভাবে একটা দেশ তার জিডিপি বৃদ্ধি ধরে রাখতে পারে, তা মোদী দেখিয়েছেন।’’
দেশের ২৩টি শহরে মোদীকে নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বিজেপি। দিল্লিতে তা আগেই শুরু হয়েছে। কলকাতায় শুরু হল বুধবার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শমীক ছাড়াও ছিলেন এই আয়োজনের দায়িত্বে থাকা দুই নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় ও শতরূপা। রাজ্য বিজেপির সাংস্কৃতিক সেলের আহ্বায়ক রুদ্রনীল ঘোষ এবং উত্তর কলকাতা জেলা বিজেপির সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষও ছিলেন। সাধারণ গৃহস্থের বিদ্যুৎ খরচ শূন্যে নামিয়ে দিতে পারে যে ‘প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর প্রকল্প’, তা কেন পশ্চিমবঙ্গে রূপায়িত হচ্ছে না, সে প্রশ্ন তুলে উদ্বোধনী ভাষণে রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেন শমীক। পশ্চিমবঙ্গে মাটির তলায় খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, ম্যাঙ্গানিজ় ও বিরল খনিজের সন্ধান মেলা সত্ত্বেও রাজ্যের অসহযোগিতায় তার উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না বলে শমীক দাবি করেন। আর যে জাদুঘরে দাঁড়িয়ে তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন, গঙ্গার অন্য পারে তার মতোই একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান ‘বটানিক্যাল গার্ডেনে’র জমি ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের’ দখলে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ করে জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে শমীক সতর্ক করে দেন।