• সিএজি’র কড়া রিপোর্টে বিস্ফোরণ!...
    আজকাল | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: গুজরাটের নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ ব্যবস্থার চূড়ান্ত ব্যর্থতার চিত্র উঠে এসেছে ভারতের মহা হিসাব নিরীক্ষক (CAG)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। রাজ্য বিধানসভায় পেশ হওয়া এই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে কার্যত কোনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই চলছে নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড (BOCW Welfare Board)। শুধু তাই নয়, বোর্ডের ৭২ শতাংশ নিয়মিত পদ শূন্য থাকায় গোটা দপ্তর কার্যত পঙ্গু অবস্থায় পৌঁছেছে।

    বোর্ডে সদস্য নেই, পরামর্শ কমিটিও অনুপস্থিত। আইন অনুযায়ী, বোর্ডে শ্রমিক ও নিয়োগকর্তাদের প্রতিনিধি থাকা বাধ্যতামূলক হলেও গত পাঁচ বছর ধরে এটি এককভাবে একজন সরকারি আমলার হাতে পরিচালিত হচ্ছে। আরও চমকপ্রদ তথ্য হলো, নীতি নির্ধারণে সহায়ক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ কমিটি ২০১১ সাল থেকে কার্যত অচল অবস্থায় রয়েছে। ফলে শ্রমিক কল্যাণ নীতি প্রণয়ন বা বাস্তবায়নে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক পরামর্শই পাওয়া যায়নি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে।

    তহবিল ব্যবস্থাপনায় গুরুতর অনিয়ম দেখা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সাল থেকে গুজরাটে শ্রমিক কল্যাণ সেস বাবদ মোট ৪,৭৮৭.৬ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ২,২৪৩ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রায় ৪৭ শতাংশ অর্থ সরকারি হিসাবেই অচলাবস্থায় পড়ে আছে। এই অর্থ শ্রমিক কল্যাণে ব্যবহার করার জন্য কোনও স্বতন্ত্র তহবিল গঠন করা হয়নি। বরং সরকারের বিভিন্ন হিসাবখাতেই এই অর্থ আটকে রাখা হয়েছে। ফলে আসল উদ্দেশ্য—অসংগঠিত নির্মাণ শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা—প্রচণ্ডভাবে ব্যাহত হয়েছে। প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, মোট আদায় হওয়া অর্থের অর্ধেকেরও কম প্রকৃত বোর্ডের কাছে পৌঁছেছে।

    সিএজি জানিয়েছে, মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি কার্যকর করার অবস্থাও ভেঙে পড়েছে। পরিদর্শক স্তরে ৪২ শতাংশ পদ খালি থাকায় একাধিক জেলায় কার্যত কোনও তদারক কর্মকর্তা নেই। অথচ ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে গুজরাটে নিবন্ধিত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান প্রায় ছয় গুণ বেড়ে গেছে। শ্রমিকসংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেলেও তদারকি বা সুরক্ষা কার্যক্রমের কোনও সঠিক ব্যবস্থা রাখা যায়নি। এর ফলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, মজুরি এবং সামাজিক সুরক্ষা কার্যত উপেক্ষিত অবস্থায় রয়ে গেছে।

    সিএজি’র এই রিপোর্টে গুজরাট সরকারের শ্রম কল্যাণ ব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একদিকে বোর্ডে সদস্য বা পরামর্শ কমিটি নেই, অন্যদিকে কর্মচারীর ঘাটতি ও তহবিলের অপব্যবহার শ্রমিক কল্যাণের কাঠামোকে সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি শুধু প্রশাসনিক গাফিলতি নয়, বরং শ্রমিক স্বার্থ উপেক্ষার এক জ্বলন্ত প্রমাণ।
  • Link to this news (আজকাল)