• ১০০ বছরের বৃষ্টির রেকর্ড ভেঙে এখন ‘ধ্বংসস্তূপ’ দেরাদুন
    বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • দেরাদুন: কিডনির অসুখে আক্রান্ত মুসৌরির বাসিন্দা মুকেশ বিস্ত। প্রতি দু’সপ্তাহ অন্তর ডায়ালিসিস করতে যেতে হয় দেরাদুনের হাসপাতালে। মঙ্গলবার আচমকাই তাঁর রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। তাতেই মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার! মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে দেরাদুন-মুসৌরির হাইওয়ের বিভিন্ন অংশ। দেরাদুন ও তার আশপাশে অন্তত ১৩টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত। মুসৌরি এখন এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ! মাঝপথ থেকেই ফিরে আসতে হয়েছে মুকেশকে। তাঁর মতো অন্তত ১১ রোগী বুধবার সকালেও মুসৌরির আইটিবিপি হেলিপ্যাডে বসেছিলেন ‘এয়ারলিফ্টে’র অপেক্ষায়। পরে তাঁদের সমস্যা মিটলেও আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ৪৮ ঘণ্টাতেও কমবে না ভারী বৃষ্টি। তাই হাই অ্যালার্ট থাকছেই।

    দেরাদুনের সবথেকে জাগ্রত টপকেশ্বর মহাদেব মন্দির থেকে কোনওক্রমে প্রাণ নিয়ে ফিরেছেন পুরোহিত আচার্য বিপিন যোশি। তাঁর দাবি, ‘এমন বৃষ্টি গত ২৫-৩০ বছরে দেখিনি’। কিন্তু ইতিহাস বলছে, গত ১০০ বছরেও এমন বৃষ্টি দেখেনি দেরাদুন। গত দু’দিনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সহস্রধারা ও সংলগ্ন এলাকার। আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬৪ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে সেখানে। এর আগে এমনটা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। পুরনো রেকর্ড বলছে, ১৯২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ২১২.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল দেরাদুনের এই অঞ্চলে। অর্থাৎ ঠিক ১০১ বছর আগে এমনই সেপ্টেম্বর মাসে প্রকৃতির তাণ্ডব দেখেছিল দেবভূমি। তখন অবশ্য রাস্তাঘাট এত উন্নত ছিল না। বহুতলও দেখেনি দেরাদুন। কিন্তু এখন এই সহস্রধারা জমজমাট পর্যটন ক্ষেত্র। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা জলের ধারা দেখতে যান অনেকে। একাধিক হোটেল রয়েছে এলাকায়। সবই এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপ। পিকনিক করতে গিয়ে ভেসে গিয়েছেন অন্তত পাঁচজন। রাস্তায় জলের ধারা দেখে বোঝার উপায় নেই কয়েকদিন আগেও জায়গটা কেমন ছিল। আশেপাশের গ্রামগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। দুর্যোগ কবলিত এলাকার একাধিক রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ। রায়পুর থেকে মালদেবতা হয়ে সহস্রধারায় যাওয়ার রাস্তার বড় অংশ দু’দিনের বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে।

    সরকারি হিসেব বলছে, দেরাদুনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫ জন। ১৬ জন এখনও নিখোঁজ। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত পুনর্গঠনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে উত্তরাখণ্ড সরকার। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করা তাঁর সরকারের প্রধান লক্ষ্য। বিপদের দিনে আটকে যাওয়া পর্যটকদের বিনামূল্যে থাকার সুযোগ দিচ্ছে হোটেলগুলিও। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সহস্রধারা, প্রেমনগর, মুসৌরি, নরেন্দ্রনগর, পাউরি, পিথোরাগড় ও নৈনিতালে।
  • Link to this news (বর্তমান)