• আনন্দময়ীর আগমনে গা ভাসিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর নাম দেওয়া তিস্তাপল্লির দুর্গারা
    বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: দীর্ঘদিনের দু’টি গ্রাম গ্রাস করেছে তিস্তা। রাস্তা, বসতভিটে, খেত, পুজোর থান সব গিলেছে। দু’বছর ধরে বন্ধ দুর্গাপুজো। ঠিকানাও বদলেছে। লালটং, চমকডাঙি বদলে তিস্তাপল্লি। ঠিকানা বদল, কর্মচ্যুত হওয়ার বেদনা বহন করলেও হার মানেননি তিস্তাপল্লির দুর্গারা। মনের কোণে সেই কষ্ট চেপে তাঁরা আনন্দময়ী দশভুজার আগমনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকায় সন্তানদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন তাঁরা। দশভুজার কাছে তাঁদের প্রার্থনা— লালটং, চমকডাঙির মতো শস্যশ্যামলা হয়ে উঠুক তিস্তাপল্লি। 

    তিনবছর ধরে তিস্তার ছোবলে পাল্টেছে জলপাইগুড়ি জেলার মানচিত্র। রাজগঞ্জ ব্লকের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন দু’টি গ্রাম লালটং ও চমকডাঙি। মহানন্দা অভায়ারণ্যে থাকা গ্রাম দু’টি ডাবগ্রাম-১ পঞ্চায়েতে ছিল। চলতি বছরই সংশ্লিষ্ট দু’টি গ্রামের বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে শিলিগুড়ি শহর সংলগ্ন ডাবগ্রাম-১ পঞ্চায়েতের মাঝুয়া মৌজায়। সেটি মহানন্দা নদীর পাড়ে। গ্রামের নামকরণ তিস্তাপল্লি করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। বাঙালির মেগা উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়তেই তাঁরাও পুজো নিয়ে মাততে শুরু করেছেন। 

    গ্রামের গৃহবধূ কমলা ভুজেন বলেন, কয়েক পুরুষের ভিটে হারিয়েছি। দু’বছর ধরে দুর্গাপুজোও করতে পারছি না। সেই যন্ত্রণা থাকলেও পুজোর ক’দিন অন্যরকমভাবে কাটাতে চাই। তাই বড়দের না হলেও লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকায় ছেলেমেয়েদের পোশাক দিয়েছি। আরএক বধূ প্রেমা শেরপা বলেন, বেদনা বুকে চেপে রেখেছি। আবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করছি। আনন্দময়ী দশভুজার আগমনেও গা ভাসিয়েছি। দু’জনেই বলেন, তিস্তাপল্লিকে শস্যশ্যামলা করা, পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সাজানো, ফের গ্রামে দুর্গাপুজো করার চেষ্টা করছি। 

    প্রশাসন সূত্রে খবর, লালটং ও চমকডাঙি গ্রাম দু’টিতে পরিবারের সংখ্যা ছিল ১৩২। তাতে লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০। অধিকাংশ তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। চাষাবাদ, মাছ চাষ, গো-পালন প্রভৃতি ছিল তাঁদের মূল পেশা। এরবাইরে ১০০ দিনের কাজ ছিল। কেউ কেউ বেসরকারি সংস্থায় কাজও করতেন। বর্তমানে তাঁদের ঠিকানা তিস্তাপল্লি। সকলকে জমির পাট্টা দিয়েছে রাজ্য সরকার। তৃণমূলের মাঝুয়া বুথ সভাপতি গৌতম ছেত্রী বলেন, শুধু বসতভিটে নয়, তিস্তার থাবায় কর্মসংস্থানও হারিয়েছেন গ্রামবাসীরা। কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে রাখায় সমস্যা আরও বেড়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতায় গ্রামের মহিলারাই এখন গৃহকোণ সামলাচ্ছেন। 

    ডাবগ্রাম-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অভিরাম শৈব্য বলেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বিধবাভাতা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় শিবমন্দির থেকে গ্রামবাসীদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। পানীয় জল দিচ্ছি। নদীর বাঁধও দেওয়া হবে। ডিসেম্বরে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা পাবেন গ্রামবাসীরা। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবও সহযোগিতা করছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)