দ্রুত অপারেশনের জন্য চাওয়া হচ্ছে টাকা! সুপারের অফিসের কর্মীর নাম জড়ানোয় শুরু বিতর্ক
বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: কঠিন পরীক্ষার মুখে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। খোদ হাসপাতাল সুপারের অফিসের এক কর্মী টাকার টোপ দিয়ে রোগীর দ্রুত অস্ত্রোপচার করিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত। সেই রোগীর অস্ত্রোপচার না হওয়ায় বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
অভিযোগ, মঙ্গলবার বিকেলে অস্ত্রোপচার না হওয়ায় রোগী ও তাঁর বাড়ির লোকেরা টাকা ফেরত চাইলে তাঁদের রাস্তার মধ্যে অভিযুক্ত ওই কর্মী সহ আরও একজন মারধর করেন। মেডিকেল ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে আটকও করেছিল। কিন্তু রাতেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এতদিন দালালরাজ বা রোগী হয়রানির কোনও অভিযোগ উঠলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে এসেছে, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত কেউই লিখিত অভিযোগ করেন না। কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনায় প্রতারিত দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা শাহরুখ প্রসাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। সেখানে সুপারের অফিসের এক কর্মীর নাম রয়েছে। ৪০ হাজার টাকা শাহরুখের কাছ থেকে নিয়ে কিডনির অস্ত্রোপচার করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন অভিযুক্ত।
অভিযুক্ত ওই কর্মীকে কিছুদিন আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি বিভাগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। তারপরেও তিনি ঘুরপথে একই দায়িত্বে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ,ঠিকাদার সংস্থার চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত এই কর্মীর পিছনে কোনও প্রভাবশালীর মদত রয়েছে। তাই সবকিছু জেনেবুঝেও চোখ বুজে আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের এক সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন,এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে এখানকার পরিচালন ব্যবস্থা ও চিকিৎসকদের নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে।
হাসপাতালে সুপার ও প্রিন্সিপাল ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক দু’দিন ধরে ছুটিতে। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁর কাজে যোগ দেওয়ার কথা। অস্থায়ীভাবে তাঁর দায়িত্বে থাকা অ্যাডিশনাল সুপার ডাঃ নন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই রোগীর কাছ থেকে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সেখানে অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করে গোটা ঘটনা নিয়ে তাঁরা প্রতারণার অভিযোগ জানিয়েছেন। প্রিন্সিপালের সঙ্গে আলোচনায় বসে পদক্ষেপ করা হবে।
হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, ঠিকাদার সংস্থার কিছু কর্মী দিনের পর দিন জুলুমবাজি ও অনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গেলেই হুমকির মুখে পড়তে হয়। এর কারণ অনুসন্ধান করা দরকার। কীসের ভিত্তিতে বা কাদের প্রশ্রয়ে এদের এই বাড়বাড়ন্ত সেই দিকটা অবিলম্বে খুঁজে বের করে ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা ভেঙে পড়বে। দালালরাজ রমরমিয়ে চলবে।
এদিকে, ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার অনিমেষ দাস বলেন, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজের বরাত পাওয়ার সময় বেশকিছু কর্মী হাসপাতালের তরফে আমাকে দেওয়া হয়েছিল। অভিযুক্ত সেই তালিকায় রয়েছেন। কাজেই এই ঘটনায় আমাদের কোনও দায় নেই।