• ধর্ষণ ও খুনের পর দেহ টুকরো করে নালায়, গ্রেফতার শিক্ষক
    বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে খুন। তারপর দেহ টুকরো করে ঠান্ডা মাথায় বস্তায় ভরে ফেলা। আর শেষে সেই বস্তা ফেলে দেওয়া সেচনালায়। নৃশংসতার এই চরম পাঠ দিল ছাত্রীরই স্কুলের শিক্ষক! মর্মান্তিক এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মৃতার পরিবারের আইনজীবীর দাবি, খুনের আগে ধর্ষণ করা হয়েছে ছাত্রীকে। এই ঘটনায় ফুঁসছে গোটা এলাকা। ছাত্রীর পরিবার ও এলাকাবাসী দোষী শিক্ষকের ফাঁসির দাবি তুলেছে। এমনকী, বুধবার রামপুরহাট থানার সামনে জড়ো হয়ে অভিযুক্তকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ারও দাবি জানায় আদিবাসীরা। জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘নাবালিকাকে অপহরণের অভিযোগ জানিয়েছিল পরিবার। পুরো দেহ উদ্ধারের পরই খুনের ধারা যুক্ত করা হবে। ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ।’

    রামপুরহাট থানা এলাকার একটি হাইস্কুলে পড়ত ওই মেধাবী ছাত্রী। ক্লাসে স্ট্যান্ড করত সে। গত ২৮ আগস্ট সকাল ৭টা নাগাদ টিউশনি পড়তে বেরিয়ে ছাত্রীটি আর বাড়ি ফেরেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। অভিযোগ দায়ের হয় স্কুলেরই পদার্থবিদ্যার শিক্ষক মনোজ পালের নামে। পুলিশ ওই শিক্ষককে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। কিন্তু সে ‘নিরপরাধ’ সাজার নাটক করে বেরিয়ে আসে। মৃতার দিদিমা বলেন, ‘প্রায়ই স্কুল থেকে ফিরে নাতনি বলত, ওই শিক্ষক ওর শরীরে হাত দিয়েছে। বড় হলে বিয়েও করবে বলেছিল।’ পুলিশ জানিয়েছে, পরিবার অনড় থাকায় মঙ্গলবার ফের ওই শিক্ষককে থানায় ডাকা হয়। টানা জেরায় সে ভেঙে পড়ে খুনের কথা স্বীকার করে। 

    পুলিশ সূত্রে খবর, ‌৩০আগস্ট ওই ছাত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুনের পর বাথরুমে নিয়ে যায় শিক্ষক। সেখানে ছাত্রীর দেহ চার টুকরো করে তিনটি বস্তায় ভরে। পরে গভীর রাতে রামপুরহাটের কালিডাঙা লাগোয়া সেচনালায় ফেলে দেয়। দেহ যাতে ভেসে না ওঠে সেজন্য বস্তার সঙ্গে পাথর বেঁধে দেয়। মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ ওই শিক্ষককে নিয়ে জল থেকে দু’টি বস্তা উদ্ধার করে। তিনটি বস্তার মধ্যে যেটিতে শরীরের নীচের অংশ ভরা হয়েছিল, সেটি পাওয়া যায়নি। 

    ঘটনা জানাজানি হতেই ওই ছাত্রীর গ্রামে উত্তেজনা ছড়ায়। মৃতার বাবা বলেন, ‘আমার ছোট্ট মেয়েটা কী দোষ করেছিল? নৃশংসভাবে মেরে ফেলল শিক্ষক।’ মৃতার দিদি বলেন, ‘ও সবার ছোট। আমাদের সকলের আদরের ছিল। আমরা ওই শিক্ষকের ফাঁসি চাই।’ 

    স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত শিক্ষকের বাড়ি পুরুলিয়ায়। ২০২২ সালের জুন মাসে বদলি নিয়ে সে রামপুরহাটের এই স্কুলে যোগ দেয়। স্কুলপাড়াতেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে একা থাকত। তার স্ত্রীও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আলাদা থাকেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সাহা বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ছাত্রীটি অত্যন্ত মেধাবী ছিল। ওই শিক্ষকের মনের ভিতর কী ছিল জানি না। বাইরে থেকে দেখে কোনওদিন বোঝা যায়নি।’ 

    মৃতার পরিবারের আইনজীবী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ছাত্রীটিকে খুনের আগে ধর্ষণ করা হয়েছে।’ পুরো দেহ উদ্ধার হলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। বিচারক অভিযুক্তের ন’দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)