নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: বাংলার মেয়েদের রাজস্থানে পাচারকাণ্ডে ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে আসানসোল যোগ। সিবিআই ইতিমধ্যেই এক দম্পতি সহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে এই ঘটনায় শিল্পাঞ্চলের আরও অনেকের নাম উঠে আসছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকজন বিউটিশিয়ান সিবিআইয়ের নজরে এসেছে। তারা মূলত বিয়ের সময় কনে সাজানোর কাজ করে। সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে, রাজস্থানে নারীপাচার চক্রের মাথাদের আত্মীয়রাই অনেকে বাংলায় বিউটি পার্লার খুলে বসেছে। তেমনই এক বিউটিশিয়ানকে বুধবার সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। শুধু কি কনে সাজানো, নাকি পার্লার থেকেই শিকার ধরা হতো? তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বুধবার দুপুরে আসানসোল উত্তর থানার সুগম পার্ক আবাসনের অদূরে রাস্তার উপর একটি নীলবাতি লাগানো গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। সামনে লেখা রয়েছে ‘পুলিশ’। গাড়ির সামনে একাধিক বাইক। গাড়িটিকে ঘিরে কয়েকজন পুরুষ ও মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। গাড়ির ভিতরে এক মহিলাকে এক আধিকারিক কিছু প্রশ্ন করছেন। অন্য একজন ল্যাপটপে তা নথিভুক্ত করছেন। গাড়িতে থাকা ওই মহিলার দেওর পুরো বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, সিবিআই আমার বউদির পিসতুতো ভাইকেই রাজস্থান থেকে নারীপাচার চক্রে জড়িত থাকার জন্য গ্রেফতার করেছে। যে মহিলাকে বিয়ে দিয়ে রাজস্থানে পাচার করা হয়েছিল, তাঁকে আমার বউদিই সাজিয়েছিল। তখন আমার দাদার বিয়ে হয়নি। দাদার সঙ্গে বিয়ের আগে রাজস্থানে বউদির পাউরুটির কারবার ছিল। সেই সূত্র ধরেই সিবিআই বউদির গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করতে এসেছিল। তারপর গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। আমরা এখানে গাড়ি আটকেছি। তারপর তাঁরা গাড়িতেই গোপন জবানবন্দি নেওয়া শুরু করেন।
যদিও এই প্রসঙ্গে তদন্তকারী অফিসাররা কিছু বলতে চাননি। জানা যায়, বছর দু’য়েক আগে পূর্ব বর্ধমানের একটি মেয়েকে আসানসোলে নিয়ে এসে সেখান থেকে রাজস্থানে পাচার করে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে থানায় অভিযোগ হয়। আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার নেয় সিবিআই। রাজস্থান থেকে পাচারচক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাদের জেরা করে আসানসোল রেলপাড় এলাকার এক দম্পতির হদিশ পায়। সিবিআই অভিযান চালিয়ে তাদেরও গ্রেফতার করে। তারপরে সিবিআইয়ের নজরে আসে এক মহিলা ঘটক। তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এবার নজরে বিউটিশিয়ানরা।জানা গিয়েছে, গরিব মেয়েদের এই ফাঁদে ফেলা হয়। কখনও প্রেমিক সেজে চক্রের কেউ তাঁদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর তাদের চক্রের লোকজনই মেয়েকে কনের সাজে সাজিয়ে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। তারপর রাজস্থান নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। আসানসোল উত্তর থানা এলাকায় কান পাতলেই গরিব মেয়েদের ভিনরাজ্যে বিয়ের রেওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। তদন্তে উঠে এসেছে, একদিকে কনে সাজানো ও অন্যদিকে বিউটি পার্লারে শিকার ধরতে চক্রের তরফে কিছু বিউটিশিয়ানকেও রাখা হয়েছিল। তেমনই এক বিউটিশিয়ানের সঙ্গে এই চক্রের সরাসরি যোগ পাওয়া গিয়েছে।