• ভিড় টানতে থিমের প্রতিযোগিতায় ময়নার বিগ বাজেটের পুজোগুলি
    বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: কর্ণাটক বিধানসভা থেকে ‘পরিশ্রমেই স্বপ্নপূরণ’ সহ নানা চোখ ধাঁধানো থিমে সেজে উঠছে ময়নার বিগ বাজেটের একাধিক পুজো। বলাইপণ্ডা থেকে ময়নার পেটুয়ামোড়, রামচন্দ্রপুর থেকে কলাগেছিয়া সর্বত্র মণ্ডপশিল্পীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। পেটুয়ামোড়ে আনন্দমঠ সর্বজনীন পুজো কমিটি এবার কর্ণাটক বিধানসভার আদলে মণ্ডপ বানাচ্ছে। ময়নার মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজেটের পুজো করে পশ্চিম ময়না সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। পরমানন্দপুর জগন্নাথ ইনস্টিটিউশনের ময়দানে ওই পুজো এবার ৭৮বছরে পড়ল। সেখানকার থিম-পরিশ্রমেই স্বপ্নপূরণ। রামচন্দ্রপুর শারদ সম্মিলনীর থিম, ঝিন্দের বন্দি। আবার, দর্শক টানতে কলাগেছিয়া যুবগোষ্ঠীর বাজি, বিপন্ন শৈশব। বিগত কয়েক বছর ধরে ময়নার বিগ বাজেটের পুজো ঘিরে দর্শনার্থীদের স্রোত নামছে। এতে প্রতি বছর আরও উজ্জীবিত হচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তারা। আকর্ষণীয় মণ্ডপ গড়তে বাজেটও প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। 

    পেটুয়ামোড়ে ময়না আনন্দ শিক্ষায়তনের স্কুল মাঠে প্রতি বছর দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে জমজমাট মেলা বসে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিমান মাইতি নিজে পুজো কমিটির সভাপতি। এবার কর্ণাটক বিধানসভার আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। বিধানসভার বাইরের চিত্র হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা করছেন ময়নার সুদামপুরের শিল্পীরা। বিমানবাবু বলেন, এবার পুজো ১০বছরে পড়ল। বাজেট প্রায় ৩০লক্ষ টাকা। মণ্ডপের ভিতর ঝাড়বাতি থাকবে। পুজো চলাকালীন প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে। একদিন অর্কেস্ট্রা হবে। বলাইপণ্ডায় অবস্থিত পরমানন্দপুর জগন্নাথ ইনস্টিটিউশনের স্কুল মাঠে পশ্চিম ময়না সর্বজনীন দুর্গোৎসব ময়নার মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজেটের পুজো করে। শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয়, পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং, পিংলা, ডেবরা থেকেও হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে মণ্ডপ দেখতে আসেন। স্কুলের মাঠজুড়ে বিরাট মেলা বসে। এবার এখানকার থিম, পরিশ্রমই স্বপ্নপূরণ। বাবুইয়ের বাসা এবং বাঁশের ঝুড়ি নিয়ে মণ্ডপ সাজানোর কাজ চলছে। ভিনরাজ্য থেকে বাঁশ এনে তার থেকে ঝুড়ি বানিয়ে মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে। পরিশ্রম করেই কীভাবে সাধারণ জিনিস দিয়ে অতীব সুন্দর শিল্পকর্ম করা সম্ভব সেটাকেই ফোকাস করা হয়েছে। কাঁথির প্রায় ৪০জন শিল্পী রাতদিন কাজ করছেন। পুজো কমিটির সম্পাদক সুব্রত মালাকার বলেন, এবার পুজো ৭৮বছরে পড়ল। বাজেট ৪০লক্ষ টাকা। মহালয়ার দিক সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। তারপর নানা কর্মসূচি চলবে। পঞ্চমীর দিন মণ্ডপ উদ্বোধন হবে। রামচন্দ্রপুর শারদ সম্মিলনীর থিম- ‘ঝিন্দের বন্দি’। রুপোলি পর্দার একঝলক দৃশ্যকে মণ্ডপে তুলে ধরছেন উদ্যোক্তারা। পুরনো লোহালক্কড় ও সামগ্রী নিয়ে কারাগারের সেল বানানো হচ্ছে। প্রতিমার গয়না ও ব্যাকগ্রাউন্ড সবটাই কাঠের ছিলায় তৈরি। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য সঞ্জীব মাইতি বলেন, এবার পুজো ১০বছরে পড়ল। বাজেট প্রায় সাড়ে ১০লক্ষ টাকা। পঞ্চমীর দিন পুজো উদ্বোধন হবে। 

    কলাগেছিয়া যুবগোষ্ঠীর থিম বিপন্ন শৈশব। পুজোর সময় এক অনাথ শিশুর অসহায় অবস্থা, মনের ভাবনা এবং প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজেকে অসুর বিনাশকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। একটি চায়ের দোকানে অনাথ শিশুর অসহায় অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। তিনটি দুর্গা প্রতিমা হয়েছে। এক জায়গায় ওই শিশু নিজেকে মা দুর্গার সন্তান ভেবে গণেশের জায়গায় বসে আছে। আরেক জায়গায় শিশুকেই অসুর বিনাশকারী হিসেবে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা জয় করে মা দুর্গার জায়গায় বসানো হয়েছে। কলাগেছিয়া, দক্ষিণ হরকুলি ও মাসমচক গ্রামের বাসিন্দারা ওই উৎসবে সরাসরি শামিল হন। পুজো কমিটির সম্পাদক জগন্নাথ মাইতি বলেন, পুজো ৪১বছরে পড়ল। বাজেট ১৫লক্ষ টাকা। প্রতিমার শরীরে কাচের গয়না থাকবে।  ময়নার আনন্দমঠ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)