বৃষ্টিতে গাঁদা ও রজনীগন্ধার চাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় চাষিরা
বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: দুর্গাপুজোর ঢাক বাজতে আর দেরি নেই। কিন্তু উৎসবের মরশুমে লাগাতার বৃষ্টিতে চরম সমস্যায় পড়েছেন জেলার ফুলচাষিরা। বিশেষ করে গাঁদা ও রজনীগন্ধা চাষ নদীয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। লাভ তো দূরের কথা, চাষের খরচও তুলতে পারছেন না অনেকেই। আবহাওয়ার দ্রুত উন্নতি না হলে পুজোর বাজারে চাহিদা মতো ফুল সরবরাহ করা যাবে না বলেই আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। ইতিমধ্যেই ফুলের দাম বাড়ার ইঙ্গিতও মিলতে শুরু করেছে।
গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা বর্ষণ চলছে। ফলে জেলার বহু ফুলের জমি জলমগ্ন। রবিবারের পর থেকে আরও বেড়েছে বৃষ্টি। ফলে নতুন করে চাষ শুরু করা নিয়েও দ্বিধায় রয়েছেন অনেকেই।
জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে খবর, এই বছর নদীয়ার ১৮ ব্লকে মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ফুলচাষ হয়েছে। এর মধ্যে রানাঘাট-১ ও রানাঘাট-২ ব্লক ফুলচাষের মূল কেন্দ্র। এখানকার ফুল প্রতিদিনই কলকাতা, হাওড়া, শিলিগুড়ি-সহ ভিনরাজ্যে রপ্তানি হয়। ফলে এই বিপর্যয়ের প্রভাব সরাসরি পুজোর বাজারে পড়তে পারে। মাঝে দু’দিনের রোদ ঝলমলে আকাশ দেখে চাষিরা কিছুটা আশাবাদী হলেও বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ফের ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিতে আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে। বুধবার ধানতলার পুরাতন চাপড়ার ফুল চাষি মলয় বিশ্বাস বলেন, সকাল থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করছি জমি থেকে জল বের করার জন্য। একবিঘে জমি বছরে ১৫ হাজার টাকায় নিয়েছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির জন্য জল ঢুকে ফুল গাছের ক্ষতি করে দিল। তা সামলে উঠতে পারব কি না সন্দেহ।
একই আশঙ্কার সুর এখন পায়রাডাঙার ফুল চাষি রবি বিশ্বাসের গলায়। তিনি বলেন, গাছের গোড়ায় জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েইছে। এরপরে ফের রোদ উঠলেই পচন ধরবে ফুলে। সবচেয়ে বড় চিন্তার, সামনেই পুজো। ওই সময় আমরাও একটু লাভের মুখ দেখি। কিন্তু চাহিদা মতো ফুল সরবরাহ করতে পারব কি না, বুঝতে পারছি না।
এলাকার চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এক বিঘা রজনীগন্ধা চাষে খরচ হয় প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টাকা। আবার ওই একই পরিমাণ জমিতে গাঁদা চাষে লাগে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
এত বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে যদি ফসল নষ্ট হয়, তাহলে ঋণের বোঝা বাড়বে বলেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেকে। জেলা উদ্যানপালন দফতরের এক কর্তা বলেন, জমিতে যাতে জল না দাঁড়ায়, সেই ব্যবস্থা করাটা এখন গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি ক্ষতির আশঙ্কা নেই। চাষিরা যে কোনও পরামর্শের জন্য ব্লক অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই পারেন। জেলার ফুলচাষিরা এই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলাতে সক্ষম। -নিজস্ব চিত্র