বিসর্জনের পর রায়নার দাসপাড়ায় উৎসব, ঢাকিদের পরিবারে পোশাক কেনার ধুম
বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: প্রতিমাকে জাগাতে প্রতিবারই গর্ভধারিণীকে ছেড়ে যেতে হয় শ্রীকান্ত রুইদাস, বেচারাম রুইদাসদের। ষষ্ঠীর সকালে মা দরজায় হলুদের ফোঁটা দিয়ে ছেলের মঙ্গল কামনা করেন। তাছাড়া উপায় নেই। ছেলেরা ঢাক কাঁধে বাড়ি না ছাড়লে পরিবারের লোকজনদের নতুন পোশাক হবে না যে। সংসার চালাতেও সমস্যা হবে। তাই যন্ত্রণা নিয়ে তাঁদের কেউ কলকাতা কিংবা হুগলির পুজো মণ্ডপে যান। দাসপাড়া মূলত ঢাকিদের বাসস্থান হিসেবেই পরিচিত। বছরের অন্যান্য সময় বিভিন্ন কাজ করলেও, পিতৃপুরুষের পেশাকে জিইয়ে রাখতে পুজোর দিনগুলিতে তাঁরা কাঁধে ঢাক তুলে নেন। কেউ বাড়ি ফেরেন একাদশীর বিকেলে, আবার কেউ দ্বাদশীর সকালে। মায়ের বিসর্জনের পরই তাঁদের পরিবারে বোধনের সুর বেজে ওঠে। ঢাকিরা বলেন, আগে পুজোর সময় ছাড়া তেমন কাজ পাওয়া যেত না। এখন রাজ্য সরকারের কল্যাণে বছরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ মেলে। বাড়তি আয় হয়। তাই নতুন প্রজন্মও এই পেশায় আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ঢাকি শ্রীকান্ত রুইদাস বলেন, পুজোর একমাস আগে থেকেই মহড়া শুরু হয়ে যায়। ঢাক রোদে না দিলে বোল ওঠে না। ভালো বোল তুলতে না পারলে ‘বাবু’দের মন জয় করা দায়। তাঁদের ভালো লাগলে বকশিস পাওয়া যায়। অনেকেই নতুন নতুন বোলে ঢাক বাজাতে বলেন। সেই কারণে আগে থেকে মহড়া দিতে হয়।
অপর এক ঢাকি বলেন, পুজোর দিনগুলিতে বাড়ির বাইরে থাকলে মন খারাপ করে। কিন্তু কিছু করার থাকে না। এই দিনগুলিতেই বাড়তি আয় করা যায়। পরিবারের সদস্যদের নতুন পোশাক কিনে দিতে পারি। পরিবারের লোকজনদের জন্য অনেক কিছু কিনে আনা যায়। বেচারাম রুইদাস নামে আরেক ঢাকি বলেন, বর্ধমান শহরে ঢাক বাজানোর বায়না পাওয়া গেলে তবুও রাতের দিকে বাড়ি ফেরা যায়। কিন্তু বাইরে চলে গেলে সেই সুযোগ থাকে না। বাইরে গেলে বাড়তি পারিশ্রমিক পাওয়া যায়। সেই কারণেই বাইরে যেতে হয়। মায়েদের মন খারাপ করে। সবার বাড়িতে যখন আনন্দ হয়, তখন আমাদের বাড়িগুলি ফাঁকা পড়ে থাকে। পুজো মণ্ডপে ঢাক বাজিয়েই আনন্দ খুঁজে নিতে হয়।
পুজো উদ্যোক্তারা বলেন, ঢাকি ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ। পুজোর অনেক আগে থেকে তাঁদের অগ্রিম দিয়ে আসতে হয়। ঢাকের বোল ছাড়া প্রতিমা জাগে না। এই ধারণা যুগ যুগ ধরে আসছে। আর কয়েকদিন পরই বোধনের সুর ছড়িয়ে পড়বে। বাড়িতে বাড়িতে উৎসব শুরু হয়ে যাবে। আর তখনই গ্রামের মেঠোপথ ছেড়ে শহরের উদ্দেশে ঢাকিরা রওনা দেবেন। দরজায় দাঁড়িয়ে সন্তানের মঙ্গল কামনা করবেন তাঁদের মায়েরা।