বন্ধ-সচল কারখানা থেকে চলন্ত ট্রেন, বিশ্বকর্মার আরাধনায় মাতল শিল্পাঞ্চল
বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: হিন্দুস্থান কেবলস একসময় শিল্পাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ কারখানা ছিল। উন্নতমানের কেবলস দেশের উন্নয়নে কাজে লেগেছে। কারখানার শ্রমিকরা ভালো বেতন পেতেন। বিশ্বকর্মা পুজোয় তার আভিজাত্য প্রকাশ পেত। এখন সেখানেই শ্মশানের নীরবতা। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা কারখানা বন্ধ। মাঝেমধ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। কখনও বিএসএফ কারখানার জমি দেখছে, কখনও সিআইএসএফ। অনেকে মনে করছেন, এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশিক্ষণ শিবির হতে চলেছে। এই খবরে ভারাক্রান্ত অনেকে। তাঁরা চান, এই জমিতে কারখানাই হোক। তাই বন্ধ কারখানাতে এবছর পুজো করা হল বিশ্বকর্মার। যন্ত্রের দেবতার কাছে আর্জি একটাই, ‘শিল্পের জমিতে যেন শিল্পই হয়’। কারখানার প্রাক্তন শ্রমিক সুভাষ মহাজন বলেন, আমরা চাই কারখানার জমিতে কারখানা হোক। ঠাকুরের কাছে একটাই প্রার্থনা, ফের যেন এই মাটিতে কারখানার যন্ত্রের চাকা ঘোরে। কারখানার নিরাপত্তারক্ষী তপনকুমার মাহাত বলেন, আমরা চাই এই এখানে শিল্প হোক।
শিল্পাঞ্চলে এদিন ট্রেনে বিশ্বকর্মা পুজো হল। প্রসাদও দেওয়া হল যাত্রীদের। ধানবাদ থেকে ভোরে প্রতিদিন কোলফিল্ড এক্সপ্রেস ট্রেন হাওড়ার উদ্দেশে যায়। আসানসোল, দুর্গাপুরের মানুষের কাছেও অত্যন্ত প্রিয় এই ট্রেন। এই ট্রেন প্রতিদিন যাত্রীদের সময়মতো কর্মস্থল ও বাড়িতে পৌঁছে দেয়। যাত্রী বিবেক কুমার ধানবাদ থেকে প্রতিদিন হাওড়া পর্যন্ত যাতায়াত করেন এই ট্রেনে। এদিন ভোরে তিনি প্রথমে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের বাইরে ইঞ্জিনকে বিশ্বকর্মা রূপে পুজো করেন। তারপর চালকের কেবিনে চলে পুজো। ট্রেনজুড়ে হয় মিষ্টিমুখ। অন্যান্য ট্রেনেও যাত্রীদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ হয়েছে। রেলের বিভিন্ন ওয়ার্কশপেও ঘটা করে বিশ্বকর্মা পুজো হয়।
চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসের বিভিন্ন শপে পুজো হয়েছে। সেখানে থিমের পুজো হয়। ১৬নম্বর জেনারেল অ্যাসেম্বলি শপের থিম ছিল পরিবেশ বাঁচাও। তেমনই ১৮নম্বর বগি অ্যাসেম্বলি শপের পুজো থিম ছিল বায়ু দূষণ। এদিন পুজো উপলক্ষ্যে কারখানার শ্রমিকদের পাশাপাশি তাঁদের পরিবারের লোকজন ঢুকতে পেরেছিলেন। জেনারেল ম্যানেজার বিজয় কুমার সস্ত্রীক বিভিন্ন মণ্ডপে অঞ্জলি দেন। খাওয়ার দাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল।
ঘটা করে পুজো হয়েছে ডিএসপি কারখানাতেও। সদ্য তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন ডিএসপিতে তাদের যে কমিটি গঠন করেছে সেখানে সভাপতি করা হয়েছে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে। রাজ্য আইএনটিটিইউসির জেনারেল সেক্রেটারি নরেন্দ্রনাথ এদিন কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাঁদের নানা সুযোগ সুবিধার খোঁজ খবর নেন। তিনি বলেন, বিশ্বকর্মা পুজোর পুণ্যদিনেই প্রথম সংগঠনের সভাপতি হিসেবে কারখানায় এলাম। শ্রমিকদের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। ইস্কো, এএসপি থেকে ইসিএলের বিভিন্ন কোলিয়ারিতে ঘটা করে বিশ্বকর্মা পুজো হয়। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, অটো স্ট্যান্ডগুলিতে পুজো হয়। রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, দুর্গাপুর ও কাঁকসার বেসরকারি কারখানাগুলিতেও ঘটা করে পুজো হয়েছে। চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস কারখানার বিশ্বকর্মা পুজো।-নিজস্ব চিত্র