নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: বিহারের ভোট এবং বাংলায় উৎসবের মরশুমে ব্যাপকভাবে জালনোট ঢোকানোর ছক কষা হয়েছে। বিহারের নির্বাচনে এই টাকা ব্যবহার করা হবে। উৎসবের মরশুমে লেনদেনের সময়েও সেই নোট চালানোর চেষ্টা করা হবে। এই চক্রের নেপথ্যে কারা রয়েছে, তা জানতে তদন্তে নেমেছেন গোয়েন্দারা। মালদহ, মুর্শিদাবাদ সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আসা এই জাল নোটগুলি অত্যন্ত উন্নতমানের। এক লক্ষ টাকার জালনোট ৫০হাজার টাকায় কেনা হচ্ছে। বেশিরভাগই ৫০০টাকার নোট। বাংলাদেশের ক্যারিয়াররা এপারে তা পৌঁছে দেওয়ার পর গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। কখনও তা আমের পেটিতে, কখনও অন্য সামগ্রীর আড়ালে তা বিহারে ও এরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২সেপ্টেম্বর মালদহ জেলার মহদিপুর থেকে ২১ লক্ষ টাকার জালনোট সহ দুই ক্যারিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে এসটিএফ। ওইদিনই কোচবিহারের চামটা মোড় থেকে ৯৬হাজার টাকার জালনোট উদ্ধার করেছে। তার আগে ৩১ জুলাই আসানসোলের জুবলি মোড় থেকে ৯৮হাজার টাকার জালনোট সহ রাজেন্দ্র যাদব নামে এক ক্যারিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছে থেকে ১৯৬টি ৫০০টাকার জালনোট উদ্ধার হয়েছিল। এই জালনোট মালদহ থেকে আসানসোলে আনা হয়েছিল। পরে তা আমের পেটিতে করে বিহারে নিয়ে যাওয়া হতো। তার আগেই গোয়েন্দারা জালনোট সহ ক্যারিয়ারকে গ্রেপ্তার করেন।
এক আধিকারিক বলেন, এইসময় জালনোট ঢোকাতে পাচারকারীরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে সীমান্তে নিরাপত্তার কড়াকড়ি করা হয়। এইসময় জালনোট ঢোকানোর আদর্শ সময়। এখন সীমান্তবর্তী এলাকায় ঝোপজঙ্গল হয়ে রয়েছে। রাতের অন্ধকারে ওপারের পাচারকারীরা খুব সহজেই এপারে জালনোট নিয়ে চলে আসছে। বাংলায় উৎসবের মরশুমে বিভিন্ন বাজারে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হবে।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, আসল নোটের সঙ্গে নকল নোটগুলি মিশিয়ে চালানো হবে। তবে ‘ইনপুট’ আসার পর সীমান্তে গোয়েন্দারা নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছেন। বেঙ্গল এসটিএফ একের পর এক সফল অপারেশন করলেও বিএসএফ কেন পাচারকারীদের আটকাতে পারছে না, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
গোয়েন্দাদের দাবি, এতদিন অন্ধকার জগতের লোকজন জালনোট ব্যবহার করত। কয়লা, বালি কারবারে মাফিয়ারা জালনোট ব্যবহার করত। এছাড়া গোরু পাচারকারীরাও জালনোট দিয়ে কাজ চালিয়েছে। কিন্তু, বিহারে নির্বাচনের কাজে জালনোট ব্যবহার করা হতে পারে এমন ইনপুট পেয়ে গোয়েন্দারা কিছুটা অবাক হয়েছেন।
তারা এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মালদহের কালিয়াচক এবং বৈষ্ণবনগরের কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছে। ক্যারিয়ারদের কাছ থেকেও তদন্তকারীরা বিভিন্ন তথ্য পেয়েছেন। সেই সূত্র ধরেই চক্রের পর্দা ফাঁস করার পরিকল্পনা করেছেন আধিকারিকরা।