কেশপুরের দেব পরিবারের পুজোয় জড়িয়ে চণ্ডীমঙ্গলের রচয়িতা মুকুন্দ চক্রবর্তীর নাম
বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাজদীপ গোস্বামী, কেশপুর: এখানে মাদুর্গা দশভুজা নন। মা পূজিত হন অষ্টাদশভুজা রূপে। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন চণ্ডীমঙ্গলের রচয়িতা কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর নামও। বর্তমানে এই পুজোর জৌলুস কমলেও উন্মাদনা এতটুকু কমেনি। ছবিটা কেশপুর ব্লকের গড় সেনাপত্যা গ্রামের দেব পরিবারের। জানা গিয়েছে, একসময় এই দুর্গাপুজোয় নরবলির প্রথা ছিল। ইংরেজ শাসন কালেও ধুমধাম করে পুজো হতো। তবে সেই সময় নরবলি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে শুরু হয় ছাগ বলি।
জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসত। জানা গিয়েছে, প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো পুজোর আয়োজন জোরকদমে চলছে। বাড়িতেই সাবেকি ঠাকুর তৈরি হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, বর্তমানে জাঁকজমক কমলেও পুজো বন্ধ হয়নি। এখনও আর জমিদারি নেই। বাম আমলে পরিবারের বহু জমি দখল হয়ে গিয়েছে। দেব পরিবারের সদস্য সুরজিৎ দেব বলেন, এলাকার প্রচুর মানুষ পুজো দেখতে আসেন। সাধ্যমতো পুজোর আয়োজন হয়।
কেশপুর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গড় সেনাপত্যা গ্রাম। ষোড়শ শতাব্দীতে বর্ধমান জেলার ডিহিদারের অত্যাচার বাড়তে থাকে। অত্যাচারিত হয়ে কেশপুরের আনন্দপুরের আড়রায় রায় পরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন কবিকঙ্কন মুকুন্দবাবু। তিনি আড়রার জয়চণ্ডী মন্দির সংলগ্ন বটগাছের তলায় বসেই চণ্ডী মঙ্গল কাব্য লিখেছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। বর্গী আক্রমণের সময় কেশপুরের গড় সেনাপত্যায় স্থানান্তরিত হয় পুজো। তবে প্রায় ৫০০ বছর ধরে মুকুন্দবাবুর স্মৃতি বিজড়িত পুজো হয়ে আসছে। দেব পরিবারের দুর্গামূর্তি তৈরি চলছে কদমে চলছে। দুর্গাপ্রতিমা অষ্টাদশভূজা। এখানে সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ আঁকা হয় চালচিত্রে। বাঁ দিকের ন’টি হাতে থাকে পতাকা, ধনুক, ডমরু, সর্প, কেশ, ষষ্ঠী, ঘণ্টা, দর্পণ, রজ্জু। ডান দিকের ন’টি হাতে থাকে অঙ্কুশ, শর, চক্র, শলাকা, ত্রিশূল, গদা, শক্তিশূল, বজ্র, খড়্গ। জনশ্রুতি আছে, আদি সৃষ্টিকল্পে অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডী রূপে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন দেবীদুর্গা। তাই অষ্টাদশভুজা দেবীকেই পুজো করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা এলাকার মানুষ এই পুজোয় অংশ নেন। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত একাধিক ছাগ বলি হয়। মায়ের ভোগে থাকে সাদা ভাত, মাংসের ঝোল সহ হরেক রকমের ভাজা, সবজি। শুধু নবমীর দিন প্রায় একশোর কাছাকাছি ছাগ বলি হয়। জেলা পরিষদের দলনেতা মহম্মদ রফিক বলেন, খুব ছোট বয়স থেকেই এই পুজোর গল্প শুনে আসছি। প্রচুর মানুষ এই পুজোয় আসেন। এবছরও বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হবে বলে আশাবাদী।-নিজস্ব চিত্র